রথ না পেয়ে Santro গাড়িতে চাপলেন জগন্নাথ দেব, সাথে বলরাম-শুভদ্রা

লাল্টু : বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়েছে নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে জনসমাগমপূর্ণ সমস্ত রকমের অনুষ্ঠান, খেলাধুলা ইত্যাদি। আর অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মতোই দেশে এবছর বাতিল করা হয়েছে প্রভু জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। রীতি মেনে জগন্নাথ দেবের পূজা অর্চনা হলেও রাস্তায় রথ বের না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক সেই ভাবেই রাস্তায় রথ বের না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বীরভূমের শতাব্দী প্রাচীন হেতমপুর রাজবাড়ির ব্রিটিশ আমলে তৈরি স্টুয়ার্ট কোম্পানির রথ। আর এই রথ বের না হওয়ায় রথ না পেয়ে Santro গাড়িতে চাপলেন রাজবাড়ির পাশেই থাকা গৌরাঙ্গ মন্দিরের জগন্নাথ দেব, সাথে বলরাম ও সুভদ্রা।

হেতমপুর রাজবাড়ীর পাশে থাকা গৌরাঙ্গ মন্দির প্রসঙ্গে বলতে গেলে এই মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন মহারাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তীর স্ত্রী মহারানী পদ্মাসুন্দরী দেবী। স্টুয়ার্ট কোম্পানির ওই পিতলের রথটি আনা হয়েছিল সুদূর ইংল্যান্ড থেকে এই মন্দিরের দেবতাদের ঘোরানোর জন্য। যে রথ আজও নিজের ঐতিহ্য বহন করে একইভাবে টিকে রয়েছে। তবে মন্দিরের দায়িত্ব গৌরাঙ্গ মঠের কাছে অর্পণ করা হলেও রথের দায়িত্ব এখনো বহন করছে রাজবাড়ীর ব্রজবালা ট্রাস্ট।

গৌরাঙ্গ মন্দিরের দায়িত্ব গৌরাঙ্গ মঠের হাতে অর্পণ করার পিছনে রয়েছে একটি কারণ। যেটি হল রাজ পরিবারের এই সদস্যদের হাতে এক সময় আর্থিক অনটন দেখা দেয়। সেই সময় তারা দৈনন্দিন পূজার্চনার খরচ বহন করতে পারছিলেন না। যে কারণে ২০০৭ সালে কুমার মাধবী রঞ্জন চক্রবর্তী এবং সুরঞ্জন চক্রবর্তী গৌরাঙ্গ মন্দিরের দায়িত্ব গৌরাঙ্গ মঠের উপর তুলে দেন। এরপর থেকেই গৌরাঙ্গ মঠ সমস্ত রকম দায়দায়িত্ব বহন করে আসছে গৌরাঙ্গ মন্দিরের এবং মন্দিরের দেবতাদের।

চলতি বছর করোনাভাইরাসের কারণে মঠ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রথযাত্রা অনুষ্ঠান না করার। এবিষয়ে তারা দুবরাজপুর থানায় একটি লিখিত আবেদনপত্র জমা দেন এবং তাতে জানান রথযাত্রা অনুষ্ঠান হবে না এবং মেলা এবছর বসানো হবে না। তবে রীতি মেনে রথযাত্রা উপলক্ষ্যে স্নানযাত্রা, নেত্র-উৎসব এবং রথের দিন পূজার্চনা হবে। আর সেই সকল অনুষ্ঠানগুলিতে অংশগ্রহণ করবেন কেবলমাত্র মঠের সন্ন্যাসীরা।

অন্যান্য বছর এই দিন মন্দিরের জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রা ব্রিটিশ আমলের সেই পিতলের রথে চড়লেও এবছর করোনা আবহে রাজবাড়ী থেকে রথ বের না হওয়ায় অবশেষে গৌরাঙ্গ মন্দিরের দেবতাদের চাপানো হলো মন্দিরে থাকা একটি Santro গাড়িতে। আর এই গাড়ি করে মন্দির চত্বরে ঘোরানো হলো জগন্নাথ দেবকে। রথ যেহেতু রাজবাড়ীর ব্রজবালা ট্রাস্টের। তাই রথ দেওয়ার অনুমতিও তাদেরই। এইবারই প্রথম রাজবাড়ী থেকে রথ গৌরাঙ্গ মন্দিরে এলো না। রথ না এলেও রীতি মেনেও জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে রথে চড়াতে হবে। আর দোটানায় পরে রথ না মেলায় ওই গাড়িতেই চাপানো হয় বিগ্রহগুলিকে এবং এভাবে রথযাত্রা পালন করা হলো।

দুবরাজপুরের হেতমপুর গৌরাঙ্গ মঠের সম্পাদক ভক্তি বারীদি ত্রিদন্ডী মহারাজ জানান, রাজবাড়ী থেকে রথ যেহেতু এবার মাঠে আসেনি তাই মঠেরই Santro গাড়ি করে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে ঘোরানো হলো মঠ চত্বরে। রথে যেমন দড়ি বা রশি থাকে ভক্তদের টানার জন্য, গাড়িতেও বাধা হয়েছিল রশি বা দড়ি। গাড়িটি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল এবং বিগ্রহগুলিকে বসানোর জন্য সিংহাসন করা হয়েছিল।

গৌরাঙ্গ মঠের সম্পাদক ভক্তি বারিদি ত্রিদন্ডী মহারাজ এদিন Santro গাড়ির রশি টেনে রথের শুভ সূচনা করেন। ভক্তদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে, তারা যেন বাড়িতে বসেই রথযাত্রা দেখতে পান।

প্রসঙ্গত, প্রত্যেক বছর এখান থেকে রথ বের হয় বিকাল বেলায়। শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসের জেরে ভক্তরা যাতে না আসতে পারেন সেজন্য এদিন সকালবেলায় মন্দির চত্বরে বিগ্রহগুলিকে ঘোরানো হয়। সরকারি নিয়ম মেনে ৬ থেকে ৭ জন ছিলেন।