খালি চোখে ছোলার ডালের উপর মনীষীদের ছবি এঁকে গিনেস রেকর্ড বাঙালি পড়ুয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদন : গিনেস বুক অব রেকর্ডসে নাম উঠানোর ইচ্ছা অনেকেরই রয়েছে। আর এই ইচ্ছাকে পূরণ করার জন্য নানান পন্থা বেছে নিতে দেখা যায় বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার মানুষদের। কেউ সফল হন, কেউবা ব্যর্থ হয়ে নতুন কিছু করার অদম্য চেষ্টায় নিয়োজিত হন। তবে সফল হওয়াদের তালিকায় নাম লেখালেন এক বাঙালি ছাত্রী। বাঙালি ওই কলেজ পড়ুয়া এমন কৃতিত্বের নজর রেখেছেন যা সত্যিই বিস্ময়কর। খালি চোখে চোখের নিমেষে ছোট্ট ছোলার ডালের উপর মহাপুরুষদের ছবি এঁকে সে নিজের নাম তুলে ফেললো গিনেস বুক অব রেকর্ডসে।

ছবি : শুভ্রা মন্ডল ফেসবুক ওয়াল

জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খারিজ বেরুবারি ১ নং গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার গ্রাম ঘুঘুডাঙার শুভ্রা মন্ডল এমন অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন ৭ মিলিমিটার ছোলার ডালের দানার ওপর ১ মিনিটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি এঁকে। আর এই নজির সৃষ্টি করার পর তার এখন লক্ষ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাইক্রো আর্টের মাধ্যমে নতুন করে আরও একবার গিনেস বুক অব রেকর্ডসে নাম উঠানো।

শুভ্রা মন্ডল বর্তমানে জলপাইগুড়ি প্রসন্নদেব মহাবিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাদের পরিবারে ৪ সদস্য। শুভ্রা এবং তার বাবা-মা ছাড়াও রয়েছে এক ছোট বোন। শুভ্রার বাবা ভজন মন্ডল পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আর তার মা গৃহবধূ। শুভ্রার ছোট বোন বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া।

শুভ্রার এমন কৃতিত্ব অর্জনের পর বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা জানিয়েছেন, পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু ছোট থেকেই শুভ্রার আকার প্রতি আলাদা ঝোঁক দেখে হাজার কষ্ট সহ্য করেও শুভ্রার বাবা শুভ্রাকে আলাদা করে আঁকা শেখানোর জন্য আঁকার ক্লাসে ভর্তি করেন। আর তারপর থেকেই তার প্রতিভা ফুটে উঠতে শুরু করে। খুব সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকে নিজেকে আলাদা ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে শুভ্রা। তবে অভাবের তাড়নায় এই আঁকার ক্লাস বন্ধ হয়ে যায় শুভ্রা যখন অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত। কিন্তু আঁকার ক্লাস বন্ধ হয়ে গেলেও দমে পড়েনি শুভ্রা, নিজেই আলাদা চিন্তাভাবনা থেকে নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে শুরু করে।

ছবি : শুভ্রা মন্ডল ফেসবুক ওয়াল

অভাবের তাড়নায় যখন হাতের কাছে রং তুলি নেই তখন সে গাছের পাতায় ব্লেড দিয়ে পাতার বিভিন্ন অংশ কেটে মনীষীদের পাতার মধ্যেই তুলে ধরা শুরু করে। গাছের পাতায় মনীষীদের তুলে ধরার মতো কঠিন কাজ করার পাশাপাশি বাদাম এবং অন্যান্য ডালের উপর বল পেন দিয়ে পরীক্ষামুলকভাবে ছবি আঁকা শুরু করে শুভ্রা। আর এসকলের পাশাপাশি চলতে থাকে পড়াশোনা। আর তারপরই এমন অনন্য নজিরের কৃতিত্ব তার হাতের মুঠোয় চলে আসে।

ছবি : শুভ্রা মন্ডল ফেসবুক ওয়াল

গিনেস বুক অব রেকর্ডসের সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর শুভ্রা জানিয়েছে, “লকডাউন চলাকালীন যখন বিভিন্ন মানুষ গান, কবিতা ইত্যাদি নিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরতে শুরু করেন তখন আমার মনে হয় আমিও ছবি এঁকে একটা রেকর্ড তৈরি করতে পারি। আর সেই ভাবনা থেকেই বাদামের উপর ছবি আঁকার চেষ্টা করি। কিন্তু সেবার সফল না হয়ে পরদিন ছোলার ডালের উপর বল পেন দিয়ে ছবি আঁকার চেষ্টা চালাতেই তা সফল। রেকর্ড তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে নেমে ৭ মিলিমিটার সাইজের ছোলার ডালের উপর এক মিনিটে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি এঁকে ফেলি। এরপর সেই ভিডিও গিনেস কর্তৃপক্ষকে পাঠাই। তারা পরে ভিডিও কলের মাধ্যমে আমার পরীক্ষা নেন। আর সেই পরীক্ষায় আমি সফল হতেই আমাকে কনফার্মেশন মেল পাঠানো হয় এবং সার্টিফিকেট পাঠানো হয়।”

ছবি : শুভ্রা মন্ডল ফেসবুক ওয়াল

আর এই সাফল্য অর্জনের পর আগামী দিনে শুভ্রার লক্ষ্য ক্ষুদ্র সাইজের মাইক্রো আর্ট করে গিনেস বুকে নাম তোলার। কিন্তু এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজন মাইক্রোস্কোপ জাতীয় জিনিসের। আর এখানেই তার সংশয় শুরু হয়েছে। কারণ এই মাইক্রোস্কোপ জাতীয় জিনিসটি কেনার মত সামর্থ্য তার বা তাদের নেই। যে কারণে তিনি জানিয়েছেন, “কেউ যদি তার পাশে দাঁড়ান তাহলে তিনি উপকৃত হবেন।”