‘পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে’, ইনি মানেন না! প্ৰমাণ করতে তৎপর

নিজস্ব প্রতিবেদন : ‘পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে’, এই তত্ত্বে বিশ্বাসী নন এই বাঙালি। বরং তিনি রেনেসাঁস যুগের আগের তত্ত্ব ‘সূর্যই পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে’ এতেই বিশ্বাসী। শুধু বিশ্বাসী নন, তিনি সেই তত্ত্বকে প্রমাণ করতে কোপার্নিকাস, গ্যালিলির তত্ত্বকেও ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা, ইংল্যান্ডের রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে চিঠিও পাঠিয়েছেন।

তাঁর মতে, পৃথিবী একটি মৃত নক্ষত্র। আর সূর্য হলো পৃথিবীর গ্রহ। চাঁদও পৃথিবীর গ্রহ। অন্যদিকে বুধ আর শুক্র সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তাই ওরা সূর্যের উপগ্রহ। পৃথিবীর আহ্নিক গতি আছে, তাই দিনরাত্রি হয়। কিন্তু পৃথিবীর বার্ষিক গতি নেই, পৃথিবীর চারদিকে সূর্য ঘুরছে বলেই ঋতু পরিবর্তন হয়।

এমন তত্ত্বে বিশ্বাসী কার্তিক চন্দ্র পাল নামে ব্যক্তিটি কোন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অথবা নাসা বা ইসরোর বিজ্ঞানী নন। তিনি একজন সাধারণ মানুষ। লোকে তাকে কেসি পাল বলেই চেনেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে তিনি তাঁর বিশ্বাস করা তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। হাওড়া স্টেশন থেকে ডালহৌসি স্কোয়ার, কলকাতা বইমেলা যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন তিনি তাঁর তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজের হাতের ছবি এঁকে, নিজের যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে লেখা লেখি করে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার হিসাবে সাঁটিয়েছেন। এমনকি তিনি চলন্ত বাসে যেতে যেতেও প্রচার করেছেন। এ যেন সেই রেনেসাঁস যুগের কোন এক বিজ্ঞানী।

কার্তিক চন্দ্র পাল জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাওড়ার আনুলিয়া গ্রামে। অর্থাভাবে তাঁর পড়াশোনা থেমে যায় অষ্টম শ্রেণীতেই। পরে কলকাতায় এসে ছোটখাটো কাজ করতে করতে ১৯৬২ সালের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তাঁর মনে সৌরজগৎ সম্পর্কে নানান প্রশ্ন উঁকি মারতে থাকে। সেই সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পড়ে ফেলেন নানান ধরনের মহাকাশ বিজ্ঞানের বই। কিন্তু শেষমেশ ১৯৭৪ সালে তিনি স্থির করেন সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। আর তারপর ব্যক্তিগত খরচে সেই তত্ত্বকে প্রচার করতে শুরু করেন। আর এমন প্রচারের জন্য সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার হন তিনি।

চাকরি হারিয়েও কোনরকম ভ্রুক্ষেপ হয়নি তাঁর। আর্থিক অনাহারেও চালিয়ে গিয়েছেন তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। পরে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ডে আরেকটি কাজ পেলে সেই কাজে ফাঁকেও চলতে থাকে প্রচার। এমনকি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা, ইংল্যান্ডের রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। ব্যাখ্যা করেছেন, কেন তিনি বিশ্বাস করেন যে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। যদিও সেই প্রতিষ্ঠানগুলি তাঁর বক্তব্যকে খারিজ করে দিয়ে জানাই, এতদিন বিজ্ঞানীরা যা বলে আসছেন, সেটাই ঠিক। কিন্তু তাতেও হার মানেননি কেসি পাল।

বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত এক বৃদ্ধ। তবে এখনো তিনি নিজের খরচে বই ছাপিয়ে মহানগরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত বিলি করে বেড়ান। আর সেইসব জায়গাতেও তিনি খোলা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের দিকে। তিনি বলেন তাঁর তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে দেখাক। যদিও সেই চ্যালেঞ্জ এখনো কেউ গ্রহণ করেন নি।

হাজার হাজার লোকের কাছে অপদস্ত হলেও, এমনকি বাড়িতে গঞ্জনার মুখোমুখি হয়ে তিনি ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাতেও শেষ হয়ে যাননি তিনি। অদম্য উৎসাহে এখনো পর্যন্ত তিনি তাঁর তত্ত্ব প্রচার করে চলেছেন। এমনকি তাঁর জীবনী নিয়ে তৈরি হয়েছে অরিজিৎ বিশ্বাসের বাংলা সিনেমা মেঘনাদ ভট্টাচার্য, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, অঞ্জন দত্ত, পরান বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। তবে এখন তিনি নিজের বাড়িতেই পুনরায় বসবাস শুরু করেছেন।