ফলের রস বিক্রি করে সংসার চলছে কার্গিলের বীর সেনার

নিজস্ব প্রতিবেদন : প্রতিদিনের নানান মশলাদার খবরের মাঝে হারিয়ে যেতে বসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর। যুদ্ধের সময় আমরা যাদের কমবেশি খবর রাখি, সেইসব সেনাদের সারা বছর ভুলে যায় খবর রাখতে। বিজয় দিবস হোক অথবা শহীদ দিবস, বিশেষ মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা শহীদ জাওয়ানদের ছবি পোস্ট করে থাকি, শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু বাকি সারা বছর! কেউ একবার ফিরেও দেখি না, আসলে ভুলে যায় দেখতে। কোন আহত অথবা শহীদ সেনাকে কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, অন্যান্য কি কি সুবিধা দেওয়া হবে তা থেকে যায় নিউজ ফিডের মধ্যেই।

১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে ৫২৭ জন সেনা শহীদ হয়েছিলেন, আহতের সংখ্যাও অজস্র। তাদের জন্য তৎকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল ক্ষতিপূরণ। কেউ চাকরি, কেউ জমি, কেউ পেট্রোল পাম্প ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি এসেছিল কেন্দ্র সরকার এবং অন্যান্য রাজ্য সরকারগুলি থেকে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বহুলাংশে প্রতিশ্রুতিই থেকে যায়, জটে পড়ে অনেক ক্ষেত্রেই আটকে যায় জাওয়ানদের ক্ষতিপূরণ। সেই জটের পাল্লাতে পড়ে বহু সেনারাই পাননি তাদের ক্ষতিপূরণ, পাননি প্রাপ্যটুকু। তাহলে এই দুর্মূল্যের বাজারে তাদের কিভাবে চলে সংসার? কিভাবে দিন গুজরান তাঁরা?

Source

সেরকমই উত্তর দিল্লির মুখমেলপুরের ৫৪ বছর বয়সী এক সেনা জওয়ান সতবীর সিং কার্গিল যুদ্ধের সময় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। সরকার থেকে পেট্রোল পাম্প এবং জমি পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সরকার তাকে জমি দিয়েও ছিল কিন্তু পরে আবার তা ফেরত নিয়ে নেয়। এমনকি পেট্রোল পাম্পও। জমির উপর বিনিয়োগ ও শুরু করে দিয়েছিলেন ওই প্রাক্তন সেনা সতবীর সিং। জমি বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি তিনি। ধরে রাখতে পারেননি তার প্রাপ্য অধিকার। স্ত্রী কন্যা নিয়ে তার সংসারে ৬ জন সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, ভাতা হিসেবে সরকার যে টাকা দেয়, তাতে সংসার চালানো দুষ্কর। জমি এবং পাম্প ফেরত পাওয়ার আশায় আইনি লড়াইয়ে খরচ হয়ে যায় তার সঞ্চিত অনেক অর্থই।

Source

দ্বিতীয়ত রাজপুতানা রাইফেলের সেনা ছিলেন এই সতবীর সিং। ১৯৯৯ সালের মে মাসে হঠাৎ করে পাক সেনা ভারতে ঢুকে যাওয়ার নজরে আসে তাঁর। কোন রকম সময় নষ্ট না করে তিনি খবর দেন হাইকমান্ডকে। হাই কমান্ড তাকে পাক সেনার ওপর নজরদারি রাখতে নির্দেশ দেয়। নিজের দায়িত্বে অটল ছিলেন এই প্রাক্তন সেনা। কিন্তু ৪৫ ফুট গভীর গর্ত থেকে পাক সোনার উপর নজরদারি রাখা অসম্ভব পর হয়ে পড়ছিল বলে জানান তিনি। তাই পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে চলে না যায়, তাঁর জন্য হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়েন তিনি। সাথে বোফর্স হামলাও চালাতে থাকেন এই সেনা। তাঁর সহ সেনাদের কথায়, হ্যান্ড গ্রেনেড তাঁর হাতেই ফেটে যায় এবং জ্ঞান হারান তিনি। তারা এও জানান, হাতে হ্যান্ড গ্রেনেড ফেটে যাওয়ার পরও পাকসেনাদের লক্ষ্য করে ৩০ টি বুলেট ছোড়েন তিনি।

Source

সেই ভয়াবহ রাতের কথা মনে পড়লে চোখ ছল ছল করে ওঠে ভারতীয় এই প্রাক্তন সেনার। তিনি গর্ব করেন ভারতীয় সেনাদের জন্য। সেদিন বহু লড়াইয়ের পর পাকসেনাদের হারাতে সক্ষম হয়েছিল ভারতীয় সেনা। সতবীরের কথায়, প্রতিটা দেশের সেনাদের একটাই লক্ষ্য থাকে যে কোনো উপায়ে তাদের মাতৃভূমি রক্ষা করা। দেশের জন্য লড়াইয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে লড়বে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সেই দেশই আবার রাজনীতি করে লড়াই নিয়ে, আর সেই রাজনীতির কাঁটা তারেই আটকে যায় তাদের প্রাপ্য অধিকার, আর ভেসে যায় তাদের সংসার, ভেসে যায় আপনজনেদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

Source

১৮ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পেয়ে ৬ জনের পেট চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল এই বীর সেনার। তবে লড়াইয়ে হেরে যান নি তিনি। জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে নিজের গ্রামেই একটি ফলের রসের দোকান খুলেছেন তিনি। জীবনের নতুন চ্যালেঞ্জের তিনি সম্মুখিন। দোকান বেশ ভালোই চলছে। তবে সেনার পরিচয় ভুলে, পরিচয় বেড়েছে দোকানদারি রূপে। দোকানের পাশাপাশি তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন জমি ফেরতের লড়াই। যাই হোক তিনি একজন ভারতীয় সেনা, লড়াই তো চলবেই।