করোনা ভাইরাস নিয়ে রটা কিছু গুজব ও তার সত্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদন : কেবলমাত্র চীনের মধ্যেই এখন আর আবদ্ধ নয় করোনা সংক্রমণ, ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ৭০ টি দেশে। রোজ করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্ব জুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন এই ভাইরাস নিয়ে রীতিমতো ভীত। কিন্তু এই ভীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে বেশকিছু গুজব। হ্যাঁ, পুরো বিশ্বে করোনা ভাইরাসের বিস্তারের সাথেই ছড়িয়ে পড়ছে নানান রকম গুজব, যার ফলে আরও ভীতি বাড়ছে মানুষের মধ্যে। মূলত সোশ্যাল মিডিয়াতেই ছড়িয়ে পড়ছে এইসকল ভুয়ো খবর। এই ভাইরাস প্রতিরোধে কি করা উচিত ও কি করা উচিৎ নয় সেই নিয়ে নানান ভুল তথ্য ভাইরাল এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এইসব তথ্যগুলির মধ্যে ঠিক ভুল বোঝার জন্য কিছু তথ্য জানানো হয়েছে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেসন বা WHO-এর তরফ থেকে। জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু ভুল তথ্য ও তার সত্যতা।

ভুল তথ্য : হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকোলে মৃত্যু হয় করোনা ভাইরাসের।

ঠিক তথ্য : হ্যান্ড ড্রয়ারে কখনোই কোরোনা ভাইরাস মরেনা। এই ভাইরাস এড়ানোর জন্য প্রয়োজন সাবান, জল বা সেনিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখা। তারপর হাত শুকানোর ক্ষেত্রে পেপার ন্যাপকিন বা হেয়ার ড্রাইয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভুল তথ্য : আল্ট্রা ভায়োলেন্ট আলোয় মৃত্যু হয় কোরোনা ভাইরাসের।

ঠিক তথ্য : আল্ট্রা ভায়োলেন্ট আলোয় মরে না এই ভাইরাস, বরং এই আলোর নীচে হাত রাখলে জ্বালা বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ভুল তথ্য : থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে করোনা আক্রান্তদের চেনা যায়।

ঠিক তথ্য : কারোর জ্বর থাকলে সেটা থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে বোঝা গেলেও অনেক সময়ই এই ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে জ্বর থাকেনা। সেই সময় থার্মাল স্ক্যানার ধরতে পারবেনা সংক্রমণিত ব্যক্তিকে। কারণ জ্বর সংক্রমণের ২ থেকে ১০ দিনের মধ্যে হতে পারে।

ভুল তথ্য : অ্যালকহোল বা ক্লোরিন শরীরে মাখলে করোনা ভাইরাস মরে যায়।

ঠিক তথ্য : এতে শরীরের ত্বকের মারাত্বক ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ঘর বাড়ির ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যায়।

ভুল তথ্য : চীন থেকে আসা চিঠিপত্র বা পার্সলে থাকতে পারে ভাইরাস।

ঠিক তথ্য : কোনো পদার্থের ওপর এই ভাইরাস থাকতে পারেনা। তার থাকার জন্য একটি হোস্ট প্রয়োজন তাই চিঠিপত্র বা পার্সেল নেওয়া নিরাপদ।

ভুল তথ্য : পোষ্য থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

ঠিক তথ্য : পোষ্য থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ নেই কিন্তু পোষ্যকে আদর করার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। যাতে ইকোলাই বা সালমোনেলা জাতীয় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমে।

ভুল তথ্য : নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন করোনা ভাইরাসকে রুখে দিতে পারে।

ঠিক তথ্য : করোনা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বাজারে এখনও নেই। নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন এই ভাইরাস আটকাতে পারেনা।

ভুল তথ্য : নুন জল দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে করোনা ভাইরাস শেষ হয়।

ঠিক তথ্য : এই প্রক্রিয়ায় সর্দি কাশি নিরাময় হয় ঠিকই কিন্তু এতে করোনা ভাইরাস আটকানোর মতন কোনো প্রমান নেই।

ভুল তথ্য : রসুন খেলে করোনা ভাইরাস হয় না।

ঠিক তথ্য : রসুন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ঠিকই কিন্তু এতে করোনা ভাইরাসের উপশম হয় এরকম কোনো প্রমাণ নেই।

ভুল তথ্য : তিলের তেল গায়ে মাখলে এই ভাইরাস ধরেনা।

ঠিক তথ্য : ৭৫% ইথানল, পেরেসটিক অ্যাসিড, ক্লোরোফর্ম এই ভাইরাস মারতে পারলেও তিলের তেল এই ভাইরাস ঠেকায় না। তবে সেই সকল কেমিকাল গায়ে মাখা একদমই উচিৎ নয়।

ভুল তথ্য : করোনা ভাইরাসে শুধু বয়স্ক ব্যক্তিরা সংক্রমণিত হন।

ঠিক তথ্য : সব বয়সের ব্যক্তিরা এই ভাইরাসে সংক্রমণিত হতে পারে।

ভুল তথ্য : অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে করোনা ভাইরাস মরে।

ঠিক তথ্য : অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে ব্যাকটেরিয়া মরে। তবে এটি একটি ভাইরাস, এক্ষেত্রে এই ওষুধ অচল। তবে ভাইরাস সংক্রমণের সাথে সাথে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়, সেক্ষেত্রে এই ওষুধ কাজে লাগতে পারে।