জন্মাষ্ঠমীর শুভক্ষণ ও শ্রীকৃষ্ণ আরাধনার রীতিনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদন : সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে গভীর রাত্রে কংসের কারাগারে দেবকী মাতার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। প্রবল ঝড় ঝঞ্ঝার সেই রাতে ভগবানের মায়ায় কারারক্ষী থেকে কংস সকলেই ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর ভগবানের লীলায় কারাগারের দরজার তালা পর্যন্ত খুলে যায়। আর ঝড় ঝঞ্ঝার মধ্যে বসুদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কোলে করে বেরিয়ে আসেন। বাসুকী নাগ তাদের মাথায় ছাতা ধরেন। আর এই ভাবেই বসুদেব নন্দরাজার ঘরে গিয়ে দিয়ে আসেন কৃষ্ণকে আর নন্দরাজার মেয়ে যোগমায়াকে নিয়ে আসেন কোলে করে। দুই নগরীর কোনো মানুষই এই ঘটনার টের পায় না। ভগবানের মায়ায় সকলেই নিদ্রামগ্ন হয়ে ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের এই পূণ্য আবির্ভাব তিথিই হলো জন্মাষ্টমী। শাস্ত্রে বলা হয় যে ‘জন্মিয়ে জন্মাষ্টমী’। অর্থাৎ অন্য কোন ব্রত না করলেও জন্মাষ্টমী ব্রত পরম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা উচিত। এই এক ব্রত প্রভাবেই সকল পাপ বিনষ্ট হয়।

১১ই আগস্ট সূর্যোদয়ের পরই জন্মাষ্টমীর তিথি শুরু হবে। তবে রোহিনী নক্ষত্রের প্রাধান্য অনুসারে ধরলে ১২ ই আগস্ট বুধবার জন্মাষ্টমী। জন্মাষ্টমী পালনের জন্য আগের দিন নিরামিষ অন্ন খেয়ে সংযম পালন করতে হয়। রাত বারোটার আগে এই খাবার খেয়ে মুখ ভালো করে ব্রাশ করতে হয়। যাতে‌ মুখের মধ্যে খাবারের কোনো দানা না লেগে থাকে। জন্মাষ্টমীর দিন সকালে উঠে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে উপবাস রাখতে হয় ও রাত্রি জাগরন করতে হয়। ব্রত রাখার এই দিন ভগবানের নামজপ করেও গীতা পাঠ করলে ব্রত অধিক ফলপ্রসূ হয়।

জন্মাষ্টমীর ব্রত পালনের জন্য ফুল, ফল, আতপ চাল, তুলসী পাতা, দূর্বা, ধুপ, দীপ পঞ্চগব্য, পঞ্চ গুড়ি, পাট, বালি, পঞ্চবর্ণের গুড়ো, মধু পর্কের বাটি, আসন অঙ্গুরি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। এই সকল উপকরণ দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুজো করতে হবে। এরপর ভগবানের পছন্দের মালপোয়া, ক্ষীর, মাখন ,ননী, সন্দেশ, লুচি, তালের বড়া ইত্যাদি থালায় সাজিয়ে ভগবানকে (শ্রীকৃষ্ণের অথবা গোপালের মূর্তির/চিত্রপটের সামনে) পরিবেশন করতে হবে।ভগবানকে খাবার নিবেদন করার আগে অবশ্যই তুলসীপাতা দেবেন। তুলসী পাতা ছাড়া কখনোই ভগবানকে খাবার নিবেদন করা যায় না। এরপর ‘হে জনার্দন তস্মিন তুষ্টে জগত তুষ্ট’ বলে এই সকল খাবার ভগবানকে নিবেদন করতে হবে। আর ‘নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমো’ বলে প্রণাম করতে হবে। আর ভগবানের প্রণাম মন্ত্র বলে ভগবানকে প্রণাম করতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্র হল, “হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে গোপেশ গোপিকাকান্ত রাধাকান্ত নমস্তুতে।।”

এরপর জন্মাষ্টমী তিথির ব্রত মাহাত্ম্য পড়ুন আর ভগবত গীতার একটি শ্লোক মাহাত্ম্য সমেত পাঠ করুন। এরপর ভক্তি সহকারে সেই প্রসাদ সকলে মিলে গ্রহণ করুন।

জন্মাষ্টমীর শুভক্ষণ

মঙ্গলবার ১১ ই আগস্ট ব্রহ্ম মুহূর্তে সপ্তমী তিথি থাকছে। আর রোহিনী নক্ষত্র লাগছে না। এইদিন অষ্টমী তিথি শুরু হচ্ছে ৯টা ৩৯ মিনিট থেকে।

অন্যদিকে ১২ ই আগস্ট ব্রহ্ম মুহুর্তে অষ্টমী তিথিও লাগছে এবং রোহিণী নক্ষত্র ও শুরু হচ্ছে। তাই ১২ ই আগস্ট জন্মাষ্টমী করা উচিত।

১২ ই আগস্ট ৩ টে ৫৭ মিনিট ৭ সেকেন্ডে রোহিণী নক্ষত্র স্পর্শ করছে আর এইদিন ব্রহ্ম্য মুহূর্ত থেকেই শুরু হচ্ছে অষ্টমী তিথি। ১২ আগষ্ট বেলা ১১ টা ১৬ মিনিটে অষ্টমী তিথি শেষ হচ্ছে।