অস্বস্তিতে মনিরুল ইসলাম, ২০১০ সালের লাভপুর মামলার পুনঃতদন্তের নির্দেশ

অমরনাথ দত্ত : ২০১০ সালে লাভপুরের মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের মামলায় নয়া মোড়। যার জেরে ব্যাপক বিরম্বনায় সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। বিচারক মধুমতি বেঞ্চের তত্বাবধানে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ন’বছর আগের সেই ঘটনার পুনরায় তদন্তের। এই মামলায় প্রথম থেকে যে অফিসার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন তার উপরেই পুনরায় দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয়।

ঘটনা ২০১০ সালের ৩রা জুন, ধানু শেখ, কাটুন সেখ এবং তুরুক শেখ নামে তিন ভাই খুন হন। শুধু তাই নয় সে সময় লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটানো হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় মনিরুল ইসলামসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়, যাদের মধ্যে মনিরুল ইসলামকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে দায়ী করা হয়েছিল। সেই মামলায় প্রথম তদন্তকারী অফিসার ছিলেন সর্বজিৎ বসু। আর সে সময় মনিরুল ইসলাম ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক। রাজ্যে পালাবদলের সাথে সাথে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে যোগদান তৃণমূলে। সম্প্রতি আবার তিনি তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। কিন্তু এই মামলায় এখনো পর্যন্ত ৬ জন তদন্তকারী অফিসারকে বদল করা হয়েছে।

এদিকে প্রাথমিক তদন্তে ওই ঘটনার জন্য লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের নাম মাস্টারমাইন্ড উল্লেখ থাকলেও চার্জশিটে তাঁর নাম নেই। এই মামলাটির হাইকোর্টে শুনানির সময় প্রসঙ্গটি ওঠে এবং আদালত নাম না থাকার এই ঘটনায় অখুশি হয়। যার জেরে আদালত বীরভূম পুলিশ সুপারের নজরদারিতে পুনরায় তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে এই মামলায় প্রথম তদন্তকারী অফিসারের উপরই ভার দেওয়া হয়েছে তদন্তের এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্ত সমাপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মামলাকারী এবং তার পরিবারকে সুরক্ষা প্রদানের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

মৃত ওই তিন ভাইয়ের দাদা অজয় শেখ জানান, “আদালতের রায়ে আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। তবে সেদিনের সেই ঘটনার স্মৃতি মনে পড়লে এখনও ঘুমাতে পারিনা। তবে এখনো গ্রামে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেই মিথ্যা মামলায় এক মাস জেল খাটিয়েছিল আমায়।”

কিন্তু সেদিন কি কারণে এবং কি ঘটেছিল যার জন্য ওই পরিবারের তিন ভাইকে খুন হতে হয়েছিল? সে বিষয়ে মৃত ওই তিন ভাইয়ের দাদা জানান, “আমরা বামফ্রন্ট করতাম বলেই (দাদার বক্তব্য অনুযায়ী মনিরুল ইসলাম তখন তৃণমূল করতেন) বাড়িতে মীমাংসা করার নাম করে ডাকা হয়, তারপর দরজা বন্ধ করে তাদের মেরে ফেলা হয়।”

লাভপুর মামলায় বিরুদ্ধে পুনরায় তদন্ত শুরু করার বিষয়ে বীরভূম বিজেপি জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল জানান, “তৃণমূল রাজ্যজুড়ে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি চালাচ্ছে এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আমার সেরকম কিছু জানা নেই, উনি তিনবারের বিধায়ক উনি এ বিষয়ে ভাল জানেন। আইনের উপরে আমি বেশি কিছু বলবো না। এই ঘটনায় মনিরুল ইসলামের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়, তবে তিনি যদি আমাদের দলের কোনো সহযোগিতা চান তাহলে আমরা বিচার বিবেচনা করবো, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছিনা।”