দেশ ও রাজ্যের পর এবার আলাদাভাবে পুরো গ্রামকে লকডাউন করলো গ্রামবাসীরা

লাল্টু : করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বিশ্বকে তোলপাড় করে তুলেছে তা অনস্বীকার্য। করোনার ভয়ে থর থর করে কাঁপছে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশ। চীন, ইটালি, আমেরিকা, স্পেন এরকম বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সাথে সাথে এই ভাইরাসের থাবা পড়েছে ভারতে। আর ভারতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৪ ই এপ্রিল পর্যন্ত দেশকে লকডাউন রাখার পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে এসবের উপরে এবার গ্রামবাসীরা নিজেরাই নিজেদের গ্রামকে লকডাউন রাখার পদক্ষেপ নিলো।

বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত লোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত লোবা ও বাবুপুর নামে দুটি গ্রামের বাসিন্দারা এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই দুটি গ্রাম হল বীরভূমের শেষ প্রান্তে বর্ধমান লাগোয়া। দুটি গ্রামের ক্ষেত্রেই গ্রামবাসীরা বর্ধমান থেকে তাদের গ্রামে, পাশাপাশি বীরভূমের অন্যান্য জায়গা থেকে তাদের গ্রামে ঢোকার রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। কেবলমাত্র গ্রামের মানুষেরা চাষবাসের কাজের জন্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন। কিন্তু এইভাবে কেন তারা তাদের গ্রামকে ব্যারিকেড দিয়ে লকডাউন করলেন তার পিছনে তারা তাদের যুক্তিও দেখিয়েছেন।

গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, “প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে আমরা গ্রামবাসীরা আমাদের এই দুটি গ্রামকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা আমাদের গ্রামে বাইরের কোন লোককে ঢুকতে দিচ্ছি না। কারণ আমাদের গ্রামে সেরকম ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নেই। তাই এই ভাইরাস যদি আমাদের গ্রামে একবার ঢুকে যায় তাহলে সব ছারখার হয়ে যাবে। আমেরিকার মত দেশের যদি কোমর ভেঙে যেতে পারে তাহলে আমাদের কি হবে? তাই আমরা বাইরের রাজ্য অথবা বাইরের জেলা থেকে লোক ঢুকতে দেবো না।”

একই ভাবে আরও এক ব্যক্তিও জানান, “আমাদের ছোট গ্রাম, আর এই গ্রামে যেন বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে না পারে, বাইরে থেকে কোন লোক এই রাস্তার উপর দিয়ে যেতে না পারে তার জন্য আমরা এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি গ্রামের সবার সাথে আলোচনা করে। দেশের প্রত্যেকটি গ্রাম এরকম পদক্ষেপ নিলে করোনা সংক্রমণ কিছুটা হলেও ঠেকানো যাবে।”

গ্রামের মধ্যে অন্যান্য জেলার বা বাইরের কোন লোককে প্রবেশ করতে না দেওয়া অথবা তাদের লকডাউনকে সফল করার জন্য গ্রামবাসীরা রুটিন করে পাহারা দিচ্ছেন ব্যারিকেড দেওয়া জায়গায়। তবে গ্রামবাসীরা এমন উদ্যোগ নিলেও এই উদ্যোগ কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। আর যারা প্রশ্ন তুলছেন তাদের যুক্তি হলো, শুধু গ্রামের রাস্তাকে লকডাউন করলে হবে না নিজেদের কেউ গৃহবন্দি করতে হবে, একে অন্যের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সেটা যদি ঠিকঠাক পালন হয় তবেই করোনা সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে।