প্যাকেজ ঘোষণা হলেও লোবা খোলমুখ কয়লা খনিকে ঘিরে নয়া জট

চাকরী নয় দেওয়া হবে ভাতা! ডিভিসি-র এই প্রস্তাবে ফের অসন্তোষের ঝড় লোবা জুড়ে।

হিমাদ্রি মন্ডল : পুনর্বাসনের প্যাকেজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্তের ক্ষেত্রে এমন প্রস্তাবে স্বাভাবিকভাবেই ‘না’ জানিয়ে দিয়েছেন লোবাবাসী। পাশাপাশি অন্যান্য শর্তপূরনের ক্ষেত্রেও ডিভিসি রেখে দিয়েছে নানান ধোঁয়াশা। এমনই অভিযোগ তুলে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন লোবা-র কয়লা শিল্পের জন্য জমি দেওয়া অসংখ্য মানুষ। যাদের প্রতিনিধি হয়ে জেলা প্রশাসনের দপ্তরে বৈঠকে বসা লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটির নেতারা বৈঠক শেষে সাফ বলে দিয়েছেন, “এই প্রস্তাব লোক দেখানো। এই প্রস্তাব মানব না।”

বেশ কয়েকমাস ধরেই টালবাহানা চলছে জয়দেব-খাগড়া খোলামুখ কয়লা খনি প্রকল্পের পুনর্বাসন নিয়ে। বৈঠকের পর বৈঠক পেরোলেও কয়লা খনির বরাত পাওয়া ডিভিসি-র কর্তারা দিতেই পারছিলেন না পুনর্বাসনের প্রস্তাব। তা নিয়ে লোবাবাসী-ই শুধু নয় খোদ বীরভূম জেলা প্রশাসনের কর্তারাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। সোমবার ফের ছিল পর্যালোচনা বৈঠক। সেই বৈঠকে একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখেন ডিভিসি-র কর্তারা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পূনর্বাসনের প্যাকেজ করিয়ে এদিন বৈঠকে পেশ করেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু সহ অন্যান্য কর্তারা। ছিলেন ডিভিসি-র প্রতিনিধিরা এবং লোবা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতারা।

প্রস্তাবে দেখা গেছে, প্রথমত, যে সমস্ত মানুষকে উচ্ছেদ হতে হবে এই প্রকল্পের জন্য অথবা দিতে হবে জমি তাদের চাকরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গিয়ে মাসে দু-চার হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে বলে ঘোষনা রাখেন ডিভিসি কর্তারা। যা কোনোভাবেই মানা সম্ভব নয় লোবাবাসীদের পক্ষে বলে ইতিমধ্যেই জানান মিলেছে।
 
দ্বিতীয়ত, জমির দর হিসাবে একর পিছু ১৪ লাখ টাকা দেওয়ার একটা প্রাথমিক প্রস্তাব রেখেছে ডিভিসি। ক্ষোভ সেখানেও। কারন প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার জমির বাজার দরের থেকে অনেক বেশী। ফলে এই প্রস্তাব যে লোবাবাসীর পক্ষে মানা সম্ভব নয় তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে কৃষি জমি রক্ষা কমিটির নেতারা।

তৃতীয়ত, ভিটে বাটি যাওয়া মানুষদের পুনর্বাসনের বাড়ি তৈরী করার ক্ষেত্রে পাঁচটি স্তরে ভাগ করে বাড়ি তৈরী করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিভিসি-র প্রতিনিধিরা। সেই সঙ্গে স্কুল, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মানেরও ম্যাপ এদিন প্রজেক্টরে দেখিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারেও সম্মতি মেলেনি লোবা-র প্রতিনিধিদের তরফে।

তাদের সাফ কথা, ম্যাপ দেখে গ্রামের মানুষ কিছুই বুঝবেন না। তাদের কাছে গিয়ে মডেল দেখাতে হবে। যদি তাতে গ্রামবাসী রাজী হয় তবে সেটা গ্রহন করা হবে।

এদিন বৈঠক শেষে লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটির প্রতিনিধিদের যা প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে তাতে স্পষ্ট এই পুনর্বাসন প্যাকেজ কোনোভাবেই তার মানবেন না।

লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার জানিয়েছেন, “শিল্পের জন্য হাজার হাজার মানুষ ভীটে-মাটি, জমি ছেড়ে নতুন করে উদ্বাস্তু হবেন। তাদের পুনর্বাসন হিসাবে দু-চার হাজার টাকা ভাতা মেনে নেওয়া কি করে। আসলে ডিভিসি লোক দেখানো কাজ করছে। জমির দর, বাড়ি তৈরীর বিভিন্ন স্তর যা বলা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে আমরা বলেছি ঠান্ডা ঘের বৈঠকে বসে এই সমস্যা মিটবে না। ডিভিসি-কে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলে পুনর্বাসসন প্যাকেজ স্থির করতে হবে।”
 
এব্যাপারে বীরভূমের জেলশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর মন্তব্য, “এদিন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তৈরী করা পুনর্বাসন প্যাকেজ বৈঠকে পেশ। লোবা গ্রামের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লোবা-র প্রতিনিধিরা কিছু আপত্তি তুলেছে। তারা জানিয়েছেন, প্যাকেজ সকলের জন্য সন্তোষজনক না হলে গ্রহন করা হবে না।”


    
বীরভূমের লোবায় জয়দেব-খাগড়া খোলামুখ কয়লা খনি প্রকল্পের ঘোষনা হয়েছিল জন্য চিহ্নিত হয়েছ ৩৬০০ একর জমি। যেখানে রয়েছে প্রায় ১৯৬ মিলিয়ন টন কয়লা। যার মূল্য কমকরে  যে জমির উপর পেটের ভাত নির্ভর করে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের। সেই মানুষগুলো যাতে নায্য ক্ষতিপূরন পায় তারজন্য তৈরী হয়েছিল লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটি। বাম আমলের পতনের পর তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতেই ২০১২ সালে এই লোবা এসেছিল সংবাদ শিরোনামে। জমি আন্দোলন তীব্র আকার নিয়েছিল। গ্রামের মানুষের সাথে যুদ্ধ বেঁধেছিল প্রশাসনের। পুলিস চালিয়েছিল গুলি। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা।