হাতিহত্যার সরগরমের মাঝে তিনমাস বন্দি থাকা কুকুরকে জীবন দিয়ে নজির স্থানীয়দের

লাল্টু : গত কয়েকদিন আগে আমরা দেখেছি কি ভাবে সন্তানসম্ভবা একটি মা হাতিকে আনারসের সঙ্গে বোমা খেয়ে মরতে হয়েছে। শুধু এখানেই শেষ এরপরেও ঘটেছে একের পর এক ঘটনা, কুকুরের মুখ বেঁধে রাখা, কোথাও আবার অন্য কোনো প্রাণীকে হত্যা করা। আর এসব নিয়ে তীব্র নিন্দা, সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি মানুষ মনুষ্যত্ব, মানবিকতাকে জলাঞ্জলি দিতে শুরু করেছে! না, মানুষ এখনো মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেনি, জলাঞ্জলি দেয়নি তাদের মানবিকতাকে। সেই ছবি ধরা পড়ল মঙ্গলবার বীরভূমের দুবরাজপুর শহরে।

দুবরাজপুরের পোদ্মারবাধ এলাকায় সুমন দাঁ নামে এক ব্যক্তির একটি স্টেশনারি দোকান আছে, যে দোকানটি লকডাউনের সময় থেকেই বন্ধ। দোকান বন্ধ থাকায় তারা সপরিবারে ঝাড়খন্ডে আত্মীয়র বাড়িতে চলে যান, এখনও তারা সেখানেই রয়েছেন। এই অবস্থায় ওই বন্ধ দোকানঘরে লকডাউনের সময় থেকেই একটা পথ কুকুর আটকে পড়ে। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হোক দোকানে দরজায় তালা মেরে যাওয়ায় কুকুরটি প্রায় তিনমাস ধরেই ওই দোকান ঘরের ভিতরে বন্দি। আর এতদিন পেরিয়ে গেলেও কোনক্রমে বেঁচে রয়েছে ওই কুকুরটি।

বেঁচে থাকার পিছনে স্থানীয় এক যুবক রাজেশ হাজরার কৃতিত্ব। প্রথম দিন থেকেই তালাবন্ধ দোকান থেকে ওই কুকুরের কান্নার আওয়াজ পেয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য উদ্যোগী হয় সে। দরজার পাশে সামান্য ফাঁক দিয়েই কুকুরটিকে খাওয়ানো হয়েছে, পাইপের সাহায্যে দেওয়া হয়েছে পানীয় জল। তবে সে দরজা ভেঙে কুকুরটিকে উদ্ধার করার মত সাহস দেখাতে পারেনি। কারন তাতে অন্য অপবাদ আসতে পারে। পাশাপাশি সে ভেবেছিল হয়তো দোকানের মালিক কোনো সময় এসে একবার না একবার দোকান খুলবেন, আর তখনই কুকুরটি বেরিয়ে যাবে। আসলে তার জানায় ছিল না, দোকানের মালিক ভিন রাজ্যে!

এরপর এত দিন কেটে গেলে ওই যুবক আর থাকতে না পেরে খবর দেন দুবরাজপুরের প্রাক্তন পৌরপতি পীযূষ পান্ডেকে। খবর পেয়ে পীযূষ পান্ডে সময় নষ্ট না করে ছুটে আসেন ওই দোকানের সামনে। সবকিছু দেখে খবর দেন দুবরাজপুর থানায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছান দুবরাজপুর থানার ইন্সপেক্টর মাধব চন্দ্র মন্ডল সহ অন্যান্যরা। ফোন করা হয় দোকানের মালিককে। এরপর সকলের উপস্থিতিতেই ভাঙ্গা হয় তালা এবং তারপর দীর্ঘদিন পর বেরিয়ে আসে ওই পথ কুকুরটি। কুকুরটি বেরিয়ে আসতেই খুশির হওয়া এলাকাবাসীর মধ্যে, কেউ খাওয়ালেন বিস্কুট কেউবা করলেন আদর। আর এই স্থানীয়রাই প্ৰমাণ করলেন মনুষ্যত্ব আর মানবিকতা এখনো বেঁচে আছে।