সপ্তাহে ২ দিন লকডাউন নিয়ে চিকিৎসকদের মতামত

নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশ তথা রাজ্যে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।ইতিমধ্যেই দেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ। রাজ্যেও সংখ্যাটা ৫০ হাজারের কাছাকাছি। এমত অবস্থায় রাজ্যে বেড়ে চলার সংক্রমণের গতিতে রাশ টানতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে রাজ্যে সপ্তাহে দুদিন করে লকডাউনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু এই সিদ্ধান্তের মানুষের মনে উঠছে প্রশ্ন। সত্যিই কি সপ্তাহে দুদিনের লকডাউনে লাগাম টানা যাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে! এবিষয় চিকিৎসক মহলে রয়েছে দ্বিমত। একটি বড় অংশের চিকিৎসক মহল যেখানে বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে, সেখানে আরেক অংশ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী এবিষয়ে একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে তাঁর মতামত পোষণ করেছেন। তাঁর মতে মহামারি সংক্রান্ত বিজ্ঞানের বইতে সপ্তাহে এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত লকডাউন করে সংক্রমণ আটকানোর মডেল উল্লেখ আছে এবং বর্তমানে রাজ্য সরকার সেই মডেল অনুযায়ীই সংক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করছে। তাঁর আরও বক্তব্য, বর্তমান সময়ে দেশজুড়ে একজন মানুষের অন্য মানুষদের সংক্রমিত করার হার ১.২। তার মতে এই সংক্রমণের হারকে যদি কোনোভাবে কমানো যায় তবে এই পরিস্থিতি কিছুটা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

তবে সংক্রমণের ক্ষেত্রে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন, যে হারে দেশজুড়ে সংক্রমণ বাড়ছে সেখানে দু-তিন সপ্তাহে সংক্রমণের নিরিখে ভারত শীর্ষে উঠে আসতে পারে। তবে তাঁর আশা যে তার পরে সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে পারে।

আরও একটি বিষয় তিনি উল্লেখ করেছেন, ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় ভারতে মৃত্যু হার তুলনামূলক ভাবে বেশ কম। সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্য সকলকে এখন সতর্ক হতেই হবে। মাস্ক পড়তে হবে নিয়ম মেনে। নাকের নীচে মাস পরে সংক্রমণ রোখা সম্ভব নয়। কাজেই সঠিক পদ্ধতিতে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এই দুই বিষয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে মানুষকে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বেরোনোর পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও একই পন্থা এর আগেই অবলম্বন করেছে ওড়িশা সরকার। ওড়িশা সরকার প্রতি সপ্তাহের ২দিন, শনি ও রবিবার রাজ্যজুড়ে কড়া লকডাউন জারি করেছে। তাদের দাবি এই পদ্ধতিতে বেশ কিছুটা আটকানো সম্ভব হয়েছে সংক্রমণ।

মেডিসিন চিকিৎসক সুকুমার রায় এই লকডাউনের একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির নাম ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ পদ্ধতি। ওড়িশা রাজ্যের পর পশ্চিমবঙ্গেও এই পন্থা প্রয়োগ করা হচ্ছে তবে এর ফলে সংক্রমণে কতটা রাশ টানা যাবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।

পালমোনলজিস্ট, ডাক্তার অশোক সেনগুপ্ত সর্বভারতীয় ওই সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি সপ্তাহে দুদিন লকডাউনের বিষয়টিকে সমর্থন করছেন না এবং তিনি এই সম্পূর্ণ বিষয়টিকে অযৌক্তিক মনে করছেন। তার মতে এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো দেশে এই মডেল প্রয়োগ করে সংক্রমণের হার কমানোর কোনো নিদর্শন নেই। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, সপ্তাহের পাঁচটা দিন বাসে ট্রামে করে যাতায়াত ও দুদিন বাড়ি বসে লকডাউন, এই সম্পূর্ণ বিষয়টিই হাস্যকর। কারণ বাকি পাঁচদিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা মানুষের পক্ষে কোনোভাবেই সম্বব নয়।

তাঁর আরও বক্তব্য, এই মডেল প্রয়োগের আগে সরকারের বিশেষজ্ঞ টিমের একটি বিবৃতি দেওয়া প্রয়োজন ছিল। চিকিৎসকদের মনে প্রশ্ন রয়েছে, এই মডেল প্রয়োগ করে অন্য কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে কিনা। তাঁর আরও প্রশ্ন, সপ্তাহে মাত্র দুদিন লকডাউন কেন? এনিয়ে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা জানার অধিকার মানুষের আছে।