পঙ্গপালের দল ছড়িয়ে পড়ছে দেশের ৫ রাজ্যে, সতর্কতা জারি বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশে ঢুকেছে পঙ্গপাল, বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতির সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। ভারতের উত্তর পশ্চিম রাজ্যগুলিতে নিজেদের কেরামতি দেখানোর পর পঙ্গপালের দল ধেয়ে আসছে ওড়িশা ও বাংলার দিকে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। গত বছর পূর্ব আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্যের আরব, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিপুল পরিমাণ শস্য নষ্ট করেছে এই পঙ্গপালের দল।

মুরু পঙ্গপালের এই দল পাকিস্তান থেকে ভারতে ঢোকে গত মাসে। ইতিমধ্যেই রাজস্থানের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের ফসল নষ্ট করেছে সেই পঙ্গপাল। হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশের কৃষকরা তাদের জমিতে যেকোন মুহুর্তে পঙ্গপালের প্রকোপের আশঙ্কা করছেন। মধ্য ভারতের রাজ্যগুলির পর ওড়িশা ও বাংলায় পঙ্গপাল তাদের দাপট দেখাতে শুরু করলে এই দুটি রাজ্যের কৃষি অর্থনীতি একবারে ভেঙে পড়বে বলে গভীর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ একদিকে দীর্ঘ লকডাউন অন্যদিকে আমফানের প্রকোপে মাইলের পর মাইল কৃষি জমি নষ্ট হয়েছে। যার থেকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে এই দুই রাজ্যের সরকার।

ভারতে ১লা জুন থেকে বর্ষার মরশুম শুরু হবে। পঙ্গপালের দল স্যাঁতস্যাতে জায়গায় ডিম পাড়ে। বর্ষা শুরু হলেই এদের ডিম পাড়া শুরু হবে। সবচেয়ে যেটে দুঃশ্চিন্তার বিষয় ভারত পাক সীমান্ত এলাকায় বর্ষার সময় সবচেয়ে বেশি আদ্রতা হয়। ওখানে পঙ্গপালের দল বিশাল সংখ্যায় ডিম পাড়বে। ফলে জন্ম নেওয়া এই পঙ্গপালের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশের কৃষকরা।

জয়পুরের কৃষি বিভাগের সহ-সচিব এসপি সিং জানিয়েছেন, “এখন দেশের যে অঞ্চলগুলিতে পঙ্গপালের দল রয়েছে, সেখানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাজার হাজার পঙ্গপাল মারাও পড়ছে তবে এদের সংখ্যার পরিমাণ বিপুল হওয়ায় মোকাবিলা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।”

সেইসঙ্গে তিনি আরও জানান পঙ্গপালের সমস্যায় পড়েছে বিশ্বের বহু দেশ। ক্ষতি হচ্ছে ফসল। বর্তমানে এটি একটি গ্লোবাল সমস্যা। ফলে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসাবে রাষ্ট্র সংঘে এবিষয়ে আলোচনা হতে পারে। যাতে আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যায়। পঙ্গপাল নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের কৃষি দফতর থেকে শুরু হয়েছে জোরদার প্রচার। কৃষকরা এদের সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ।

এই প্রজাতির ইংরেজি নাম লোকাস্ট। বাংলায় এদের বলা হয় পতঙ্গ। এটি ঘাস ফড়িং প্রজাতির। ইঞ্চিখানেক দৈর্ঘ্য। দেখে মনে হয় লাজুক প্রকৃতির। একা থাকলে নিরীহ কিন্তু দল বেঁধে থাকলে এরা গুরুগম্ভীর। দলবদ্ধ এই প্রজাতিকেই পঙ্গপাল বলা হয়। একটি বড় পঙ্গপাল দিনে ১২০ মাইল পর্যন্ত জমির ফসল খেয়ে ফেলতে পারে। এক বর্গ কিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল একসঙ্গে যে খাবার খায় তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে একসঙ্গে খাওয়ানো সম্ভব।

তবে এই পঙ্গপালের দলকে রুখতে বেশ কিছু নির্দেশাবলী জারি হয়েছে। যেসব জায়গায় পঙ্গপাল হানা দিয়েছে ও দেওয়ার সম্ভবনা আছে সেখানে কৃষকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সন্ধ্যার পর জমির ফসল ও গাছপালাতে ৫ শতাংশ নিম বীজ কারনাল এক্সট্র্যাক্ট (এনএসকেই) ২০০ লিটার তাৎক্ষণিক স্প্রে করতে বলা হয়েছে। ধেয়ে আসা পঙ্গপালের দিকে জোরে জোরে বাসন বাজিয়ে শব্দ করার কথাও বলা হয়েছে। যেখানে এই পঙ্গপালের দল ঝাঁপিয়ে পড়বে সেখানে তাড়ানো সম্ভব না হলে আগুন ধরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশ একের পর এক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। নতুন করে এই পঙ্গপালের বিষয় সেই বিপর্যয়ের মাত্রাকে আরও বাড়ালো বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও পঙ্গপাল মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি।