NRC ভয়! আধার সংশোধনে লম্বা লাইন পোস্ট অফিসের সামনে

হিমাদ্রি মণ্ডল : রাজ্যজুড়ে ছড়িয়েছে গুজব, খুব শিগগিরই এ রাজ্যে হবে এনআরসি। যার জেরে নাকি দেশ ছাড়তে হবে লক্ষ লক্ষ মানুষকে। আর এই গুজবের পরই আধার সংশোধন করতে পোস্ট অফিসের সামনে লম্বা লাইন জেলায় জেলায়। একই ছবি বীরভূমের সিউড়িতেও।

বীরভূমের সিউড়ির বড় পোস্ট অফিসের সামনে বেশ কয়েকদিন ধরে পড়েছে লম্বা লাইন। আর এই লম্বা লাইনের জেরে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারন পথচলতি মানুষদের। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক ছাড়িয়েছে, সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক যানজটের। সাধারণত একটি ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে দিনে ১০ থেকে ১৭ টি আধার সংশোধন করে থাকে। কিন্তু এই সংখ্যার তুলনায় গ্রাহকদের পরিমাণ হাজার গুণ। সবাই নিজের আধার কার্ড আগে সংশোধন করার তাগিদে রাত ভোর থেকেই লাইন দেওয়া শুরু করছেন পোস্ট অফিসের সামনে।

আধার কার্ডের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষের কার্ডে রয়েছে অজস্র ভুল, কারোর নাম ঠিক নেই, তো কারোর ঠিকানা, কারোর আবার বয়স। আর এই সাধারণ মানুষদের ভিড় সামলাতে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা পোস্ট অফিস কর্মচারীদের।

শুধু এনআরসি আতঙ্ক নয়, এর মাঝেও রয়েছে আবার ভোটার ভেরিফিকেশন এবং ডিজিটাল রেশন কার্ডের সাথে আধার সংযুক্তিকরণ। যে সকল কারণে আরও আধার সংশোধনে বাড়ছে ভিড়।

আধার সংশোধনের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা চিনপাই থেকে আসা পল্লবী ঘোষ নামে এক গৃহবধূ জানান, “এনআরসি হলে সমস্ত ডকুমেন্ট ঠিক রাখার জন্য আধার সংশোধন করতে লাইনে দাঁড়িয়েছি পাঁচটা থেকে।”

দুবরাজপুর এলাকা থেকে আসা এক গৃহবধূ সেরেনা বিবি জানান, “ভোর তিনটে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইনে দাঁড়ানো লোকের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। এনআরসির জন্য আমরা আধার সংশোধন করতে এসেছি।”

দুবরাজপুর ব্লকের পছিয়ারা থেকে আসা এক ব্যক্তি জানান, “সরকার বলেছে ডিজিটাল রেশন কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না থাকলে রেশনের খাদ্য সামগ্রীতে ভর্তুকি পাবো না। কিন্তু আমাদের আধার কার্ডে রয়েছে নাম ঠিকানা ভুল। তাই সংশোধন করতে সেই সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি।”

ইয়াদ মহঃ নামে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন আধার কার্ড সংশোধনের বিষয়টি অনলাইনে শুরু করে দেওয়ার। তিনি জানান, “আজকে এই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেশিরভাগ মানুষ গ্রাম-গঞ্জ থেকে ছুটে এসেছেন। সুতরাং এই প্রক্রিয়াটি যদি অনলাইনে করা যায় তাহলে তারা গ্রামে থেকেই সে গুলি করে নিতে পারবেন। আর আমাদের অধিকাংশ মানুষের আধার কার্ডে অজস্র ভুল রয়েছে। অনলাইনে এই প্রক্রিয়া চালু হলে এইভাবে রোদে গরমে এসে লাইন দিতে হবে না।”

প্রসঙ্গত এনআরসির আতঙ্ক সাধারণ মানুষদের মধ্যে থাকলেও এনআরসির বিষয় কোনরকম সূচনা কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। এমনকি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার দাবি করেছেন ‘এরা যে এনআরসি হতে দেবো না’। পাশাপাশি বিজেপির নেতারা বলছেন ‘এরাজ্যে এনআরসি হবেই’।