ছেলেকে পরীক্ষা দেওয়াতে সাইকেলে চাপিয়ে ১০৫ কিমি পাড়ি নিরক্ষর বাবার

নিজস্ব প্রতিবেদন : প্রাণ যাবে যাক তবে ছেলের পরীক্ষা যেন কোনোভাবেই মিস না হয়। ঠিক এমনই দীর্ঘ প্রতিজ্ঞ এক বাবার কীর্তি এখন সংবাদের শিরোনামে। সংবাদের শিরোনামে উঠে আসা এই বাবা নিজে নিরক্ষর। কিন্তু তার স্বপ্ন ছেলেকে শিক্ষিত করে তোলা। যে কারণে বাস-ট্রেন কিছু না পেয়ে সাইকেলে চাপিয়ে ১০৫ কিলোমিটার রওনা দিতে কোনোরকম দ্বিধা, শঙ্কা করলেন না।

লকডাউন কাটিয়ে দেশ আনলক পর্যায় পা দিলেও এখনো স্বাভাবিক নয় গণপরিবহণ। সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে ভারতে যোগাযোগের মেরুদন্ড রেল পরিষেবা। বাস এবং অন্যান্য যানবাহনও সংখ্যায় পর্যাপ্ত নয়। আর এসব কবে স্বাভাবিক হবে তাও কারোর জানা নেই। তবে এসবের মাঝেই মধ্যপ্রদেশ সরকার তাদের রাজ্যে দশম শ্রেণীর সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার আয়োজন করেছিল। আর সেই পরীক্ষায় নিজের ছেলেকে বসানোর জন্যই মধ্যপ্রদেশের এক বাবার এমন কীর্তি।

এমন কীর্তি করেছেন ৩৮ বছর বয়সী শোব্রাম নামে এক ব্যক্তি। জানা গিয়েছে তিনি নিজে কোনদিন পড়াশোনা করেননি। তবে নিজে নিরক্ষর হলেও পঠনপাঠনের গুরুত্ব কতটা তা তিনি ভালোভাবেই উপলব্ধি করেন। যে কারণে তিনি কখনোই চাননি ছেলে সাপ্লেমেন্টারি পরীক্ষা মিস করে নিজের পড়াশোনায় এক বছর পিছিয়ে পড়ুক। এরপরই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোকে মূলমন্ত্র করে সাইকেলে করে পাড়ি দেওয়া।

জানা গিয়েছে, শোব্রাম নামে ওই ব্যক্তির পারিবারিক অবস্থা সেরকম সচ্ছল নয়। যে কারণে তাদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আর্থিক অনটন নিত্য সঙ্গী। অন্যদিকে লকডাউন আর করোনার প্রকোপ এই আর্থিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহন না মেলায় প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাবে সে সামর্থ্য নেই তাদের। তবে সামর্থ্য নেই তো কি হয়েছে, ইচ্ছে শক্তিকেই মূলমন্ত্র করে ‘লাগাও পা’। সাইকেলে ছেলেকে বসিয়ে প্যাডেলে পা লাগিয়ে নিজের গ্রাম থেকে ১০৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মধ্যপ্রদেশের ধর শহরে হাজির। সময় লেগেছে ৩ দিন।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোব্রাম জানিয়েছেন, “বর্তমান পরিস্থিতির কারণে গণপরিবহনের মত কোন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে ছেলের সামনে থাকা এই সুযোগকে হাতছাড়া করতে আমরা নারাজ। কারণ এই সুযোগ হাতছাড়া করলে ছেলের এক বছর নষ্ট হবে। অন্যদিকে গণপরিবহন না পেয়ে বাইকে বা অন্য গাড়িতে আসবো তার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর সামর্থ্য না থাকলেও কারোর কাছ থেকে কোনরকম সাহায্য পাওয়া যায়নি। যে কারণে ছেলের জীবনের স্বার্থে আমি ওকে এত রাস্তা সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে এসেছি।”

মধ্যপ্রদেশ সরকারের এই সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা আসলে একটি প্রকল্প। সে রাজ্যে দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় যে সকল পড়ুয়ারা প্রথমবার অকৃতকার্য হয়ে থাকেন তাদের ‘রুক জানা নেহি’ নামে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া হয় পরীক্ষায় বসার। আর ছেলেকে সেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই ১০৫ কিলোমিটার সাইকেলে চাপিয়ে পাড়ি দেন শোব্রাম।