‘শুধু ঘোষণা নয়, আমাদের সাথে বসার পর হবে কয়লা খনি’, আদিবাসী সম্প্রদায়

হিমাদ্রি মন্ডল : টানা তিন বছরের টানাপোড়েনের পর গতকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেন, “কয়লা খনি নিয়ে সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। খুব শীঘ্রই পরিকল্পনামাফিক এই কয়লা খনি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এই কাজ সম্পূর্ণ হলে আগামী ১০০ বছর কয়লার অভাব হবে না। শুধু বাংলা নয়, গোটা ভারতবর্ষেই কয়লা চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে।”

এই ঘোষণার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন মহলে খুশির হাওয়া বইলেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বইছে আশঙ্কার বাতাবরণ। কারণ বীরভূমের মহঃবাজার এলাকায় ডেউচা, পাঁচামি, দেওয়ানগঞ্জ, হরিণ সিংহা এবং তার আশেপাশের মাটির নিচে ২১০ কোটি ২০ লক্ষ টন কয়লা মজুদ রয়েছে, তা উত্তোলন করতে হলে আদিবাসীদের বাসভূমি খোয়াতে হবে। এই সকল এলাকায় রয়েছে কয়েকশ গ্রাম, হাজার হাজার মানুষের বসবাস। যাদের মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী সম্প্রদায়ের।

গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর মহঃবাজারে কয়লা খনি নিয়ে ঘোষণার পর আজ ঐ সকল এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা জানান, “শুধু চেয়ার-টেবিলে বসে কয়লাখনির ঘোষণা করে দিলেই হবে না। এখানে কয়লা খনি করতে হলে আগে আমাদের সাথে এসে বসতে হবে। আমাদেরকে সকল দাবিদাওয়াগুলো রয়েছে সে গুলোকে পূরণ করতে হবে, যেমন পুনর্বাসন, মন্দির এবং অন্যান্য যা আমাদের রয়েছে তার সবই পূরণ করতে হবে। খবরের কাগজ এবং টিভির পর্দায় কয়লা খনির খবর শুনতে পেলেও এখনো পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে কেউ আমাদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ করেননি।”

গ্রামের আরও এক বাসিন্দার রামেশ্বর বাসকি জানান, “শুধু ঘোষণা করলেই হবে না, আমাদের সাথে সরকারের লোক বসুক, আমাদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করে দিক। যে সমস্ত জমির দলিল উল্টোপাল্টা হয়ে আছে সেগুলিকে আগে ঠিক করে দিক, তারপরেই হবে কয়লা খনি।”

প্রসঙ্গত, এখানে পাশাপাশি ২৭ টির বেশি গ্রাম রয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে। যাদের প্রত্যেকেই এখন আশঙ্কায় রয়েছেন জমি হারানোর, রুজি রোজগার হারানোর। তাদের আশঙ্কার আরও বড় কারণ হলো তাদের জমির কাগজপত্র। এছাড়াও তাদের আশঙ্কা, তারা কেউ গাড়ি চালাতে পারেন না, বড় বড় মেশিন চালাতে পারেন না, এখন পাথর খাদানে কাজ করে যেটুকু রোজগার হয়, এখানে কয়লা খনি হয়ে গেলে কি করে তারা কাজ করবেন বা রোজগার করবেন।

যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রথম থেকেই ঘোষণা করে আসছেন, মহঃবাজারের এই এলাকায় কয়লা খনির কাজ সম্পূর্ণ হলে লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।

আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবিন সোরেন জানান, “মুখ্যমন্ত্রী বা প্রশাসনিক পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা সরাসরি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের সাথে বসুক। তাদের সাথে কথা বলে কর্মসংস্থান থেকে পুনর্বাসনে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক সরকার। কোন দিকে যে সমস্ত খাস জমিতে যারা রয়েছেন তাদেরও ব্যবস্থা করুক সরকার।”