‘চা কাকু’ মৃদুল দেবকে ভিডিও কল মিমি-র, নিলেন যাবতীয় দায়িত্বভার

নিজস্ব প্রতিবেদন : ২২ শে মার্চ যে জনতা কার্ফু এটা না জেনেই ঐদিন চা খেতে বেরিয়েছিলেন তিনি। তারপর তার বলা একটা ছোটো কথা। ব্যস মুহূর্তের মধ্যে তিনি ভাইরাল। তার বলা সহজ সরল একটা প্রশ্ন, ‘আমরা খাবো না চা? চা খাবো না আমরা!’ তারপর থেকেই তিনি আজও ট্রেন্ড হয়ে গেলেন সোশ্যাল সাইটে। তিনি আমাদের চা কাকু।

যাদবপুরের শ্রীনগর কলোনীর মৃদুল দেব তিনি। প্রথম দিকে তাকে নিয়ে সকল মিমারসরাই মেতে র‌ইলেন। চা কাকুদের নিয়ে তৈরি হলো গানও। এরপর আর একটি ভাইরাল হ‌ওয়া ভিডিওটিতে দেখা গেলো তাকে ঘরে বসে চা খেতে। আর এরপর যে ছবিটি ভাইরাল হলো তাতেই উঠে এলো তার পরিচয়। একজন খেটে খাওয়া দিন মজুর তিনি। ভাইরাল হ‌ওয়া সেই ছবিতে তাকে মাটি কাটতে দেখা যাচ্ছিলো।

রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার ঘরে স্ত্রী, ছেলে ছাড়াও রয়েছেন বৃদ্ধা মা, প্রতিবন্ধী দিদি। গোটা ঘরে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট। কিছু না জেনেই সেদিন চা খেতে গিয়েছিলেন তিনি। আর তার জন্য তাকে ট্রোল হতে হয়। খেটে খাওয়া মানুষ তিনি। মৃদুল দেবের কথা অনুযায়ী, “আমাকে নিয়ে সবাই মজা করছে। আমার পেট ভরছে না পরিস্কার! আমার পেট ভরার রাস্তাটা তৈরি করে দিন!”

সোশ্যাল মিডিয়ায় তার এই ইন্টারভিউও ভাইরাল হয়। যেখানে লকডাউনের জেরে কাজ বন্ধের জন্য তার চিন্তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে। মৃদুলবাবুর বক্তব্য, ‘যার কষ্ট সেই বোঝে’। আর তার এই বিপদের সময়ই তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। মহারাজ বাড়িয়ে দেন তার সহযোগিতার হাত। এরপর যাদবপুরের সাংসদ মিমিও সহযোগিতার হাত বাড়ালেন চা কাকুর দিকে।

সাংসদ মিমি চক্রবর্তী শুক্রবার তার তরফ থেকে একজন প্রতিনিধিকে পাঠান চা কাকু ওরফে মৃদুলবাবুর বাড়িতে। সেই প্রতিনিধির ফোনেই মিমি মৃদুলবাবুর সঙ্গে নিজে ভিডিও কল করে কথা বলেন। ভিডিও কলে মিমি মৃদুল বাবুর শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে জিঞ্জাসাবাদ করেন। এরপর তিনি মৃদুল বাবুকে বলেন, লকডাউনের মাঝে তার কোনোরকম অসুবিধে হলে, মৃদুল বাবু যেন মিমির এক জনপ্রতিনিধিকে ফোন করেন। এই জন্য মিমি নিজের এক প্রতিনিধির ফোন নম্বর ও মৃদুলবাবুকে দিয়ে দেন। এ ছাড়াও মিমি মৃদুল বাবুর ছেলের পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করে মৃদুল বাবুকে আশ্বস্ত করেন। লকডাউন উঠলেই মিমি মৃদুল বাবুর ছেলের পড়াশোনার বিষয়টি যে দেখবেন তা জানান। মৃদুল বাবু যেন এখন এই লকডাউনে চা খেতে বাইরে না যান সেই কথা ও মিমি বলেন চা কাকুকে।

প্রসঙ্গত, মিমি তার প্রতিনিধির হাত দিয়ে মৃদুলদেবের পরিবারের জন্য চাল, ডাল ও সংসারের অত্যাবশকীয় জিনিসের সাথে চা পাতাও মনে করে পাঠিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে চা কাকুর ছবি ভিডিও ভাইরাল হ‌ওয়াতে এই খেটে খাওয়া মানুষটির অন্তত একটি সুরাহা হলো। ধন্যবাদ যারা মৃদুল দেবের আসল চেহারা সবার সামনে নিয়ে এসেছেন, ধন্যবাদ যাঁরা ‘চা কাকু’কে মিম করেছিলেন তাদেরকেও। কারন তাছাড়া তো আজ এতকিছু জানা যেত না।