ভারতের চন্দ্রযাত্রা নিয়ে নাসার ট্যুইট আপনাকে গর্বিত করবে

নিজস্ব প্রতিবেদন : শনিবার গভীররাতে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার আগেই ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ভারতের চাঁদে অবতরণের প্রথম প্রয়াস আপাতত সম্ভব হয়নি, যদিও এখনো কেউ আশা ছাড়েননি। ঠিক এই মুহুর্তেই গত ৬ দশকে মাত্র ৬০% চন্দ্রাভিযান সফল হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা নাসা। নাসা জানিয়েছে, গত ৬০ বছরে ১০৯ টি চন্দ্রাভিযানের মধ্যে মাত্র ৬১টি সফল হয়েছে। তাই শুধু ভারতের সাম্প্রতিক চন্দ্রাভিযান সাফল্যের কাছাকাছি এসেও সামান্য একটুর জন্য হাতছাড়া হয়েছে। আর এমনটা খুব একটা নগণ্য নয়।

চাঁদে নামার প্রথম চেষ্টা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫৮ সালের ১৭ই আগস্ট। সেবার তাদের চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হয়। ১৯৫৯ সালের ৪ই জানুয়ারি রাশিয়া চাঁদে প্রথম সফল অভিযান করতে সমর্থ হয়। এরপর ১৯৫৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৫৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউএসএসআর সেই সময় ১৪টি চন্দ্রাভিযান করে। কিন্তু এই ১৪টির মধ্যে ইউএসএসআর পরিচালিত লুনা ১, লুনা ২ এবং লুনা ৩ কেবলমাত্র সাফল্য লাভ করে।

কিন্তু গত ৬ দশকে ৬০ শতাংশ চন্দ্রযাত্রা ব্যর্থ হয়েছে কেন?

নাসা জানিয়েছে, প্রথমত রকেট উৎক্ষেপণ একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। জ্বালানি চেম্বারে কোন প্রকারের গলদ থাকলে রকেট উৎক্ষেপণের মূহূর্তেই রকেটটি ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, চন্দ্রযান-২ এর প্রথম উৎক্ষেপনের প্রচেষ্টা এই কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বাধা পের করা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। সেটাও যদি অতিক্রম করা যায় তাহলে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চাঁদের কক্ষপথে মহাকাশযানকে বসানো। এই ৬ দশকে হওয়া অধিকাংশ চন্দ্রযাত্রায় এই কক্ষপথ পেরতে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে, যার অধিকাংশ লুনার মিশন। এরপরের চ্যালেঞ্জ সফ্ট ল্যান্ডিং। একটু এদিক ওদিক হলেই মহাকাশযান হয় চাঁদের বুকে আছড়ে পড়বে, নাহলে ছিটকে বেরিয়ে যাবে।

তবে ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন চন্দ্রযান-২ তার কক্ষপথের কার্যকারী অবস্থায় রয়েছে এবং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেটি কাজ করবে। চন্দ্রাভিযান ১০০% সফল না হলেও যে উদ্দেশ্যে চন্দ্রযানকে পাঠানো হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য অবশ্যই সফল হয়েছে। চন্দ্রযানের অরবিটার এখনো কাজ করছে।  কিছুটা দূর থেকে চাঁদকে সে এখনো প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এই অরবিটার চাঁদের অনেক ছবি তুলে এখনো ইসরোকে পাঠাতে পারে। এমনকি ল্যান্ডার বিক্রমের ছবি তুলেও তার বর্তমান অবস্থা ও পরিস্থিতির ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের জানাতে পারে সে।

ভারতের চন্দ্রাভিযান ১০০% সফল না হলেও ইসরোর এই প্রচেষ্টা নজর কেড়ে নিয়েছে গোটা বিশ্বের। প্রতিবেশী পাকিস্তান যখন ভারতের ব্যর্থতা নিয়ে উল্লাস করছে তখন আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা অভিনন্দন জানিয়েছে ইসরোকে। ট্যুইট করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন নাসা। একটি ট্যুইটে নাসা লিখেছে, “মহাকাশটা বড্ড কঠিন। তোমাদের পথ চলা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আগামী দিনে সৌরজগতের আরও বেশি করে আবিষ্কার করার সঙ্গী হতে পারি আমরা।”