শরবত ব্যবসার আড়ালে স্বদেশী আন্দোলন, নেতাজীর সঙ্গে জড়িয়ে ‘প্যারামাউন্ট’

নাম তাঁর নেতাজি। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে স্বতন্ত্র এক প্রতিভার অধিকারী হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর নামের তুলনায় তাঁকে নেতাজি হিসেবেই সকলে চেনে। তবে এই নেতাজির সাথে জড়িয়ে আছে কলেজস্ট্রিটের ‘প্যারামাউন্ট’-এর একাধিক মুহূর্ত। আসন্ন নেতাজির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষেই ফিরে দেখা নেতাজির সাথে সেই ‘প্যারামাউন্ট’-এর একাধিক স্মৃতি।

কলকাতার বই পাড়া এবং কফি হাউজের জন্য বিখ্যাত একটি জায়গা হল কলেজস্ট্রিট। এছাড়া, কলেজ স্ট্রিটের ‘প্যারামাউন্ট’ হাউজও সকলের কাছে একটি জনপ্রিয় জায়গা। এই ‘প্যারামাউন্ট’-এর সাথে জড়িয়ে আছে নেতাজির একগুচ্ছ স্মৃতি। শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও বঙ্কিমচন্দ্র স্ট্রিটের এই ‘প্যারামাউন্ট’ হাউসের কথা কেউই ভুলতে পারেনা। কারণ নেতাজির জন্যই এই ‘প্যারামাউন্ট’ হাউসের নাম আজও জ্বলজ্বল করছে সর্বত্র।

সালটা ছিল ১৯১৮। এই ‘প্যারামাউন্ট’ প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন শ্রী নিহাররঞ্জন মজুমদার। ঢাকার বরিশাল থেকে কলকাতায় এসে এই প্রতিষ্ঠান সূচনা করেন নিহাররঞ্জন। তবে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রথমে নিহাররঞ্জন নাম দেন ‘প্যারামাউন্ট’। তবে পরবর্তীতে এর নাম হয় ‘প্যারামাউন্ট’। এই প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু হয় একটি শরবতের ব্যবসা। আর সেই শরবত ব্যবসার পিছনেই চলত স্বদেশীদের নানা রকম কৌশল। ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে প্রতিদিন নানা রকম ফন্দি আঁটতেন স্বদেশী বিপ্লবীরা। চলত গুপ্ত সমিতির কাজ।

এই প্যারামাউন্ট শরবত-এর দোকানে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন মেঘনাদ সাহা, মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায়, অনুপ কুমার, বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, কবি কাজি নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন, অমর্ত্য সেন, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে আসতেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও। তবে হঠাৎ করেই একদিন ব্রিটিশদের চোখে পড়ে যায় স্বদেশী বিপ্লবীদের ওই গুপ্ত সমিতির কাজ। তারপরে বন্ধ হয়ে যায় ওই শরবতের দোকান। তবে পুনরায় ১৯৩৭ সালে আবার খোলে শরবতের দোকান। আর সেই সময় এই দোকানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘প্যারামাউন্ট’। তবে বর্তমানে সেই প্রতিষ্ঠানে সেইসব ব্যক্তিদের নামের তালিকা আজও টাঙানো রয়েছে দেওয়ালে। রয়েছে নেতাজির নাম। যার কারণে আজও সকলের কাছে বিখ্যাত এই ‘প্যারামাউন্ট’ হাউস বা প্রতিষ্ঠান।