জীবিত না মৃত, আজও অধরা নেতাজির শেষ জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদন : বাঙালি তথা সারা ভারতবর্ষের আদর্শ তথা দেশনায়ক হলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দেশের স্বাধীনতার জন্য দিনের পর দিন ব্রিটিশদের সাথে আপ্রাণ লড়ে গেছেন তিনি। তবে আজও তার নিখোঁজের রহস্য ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আদৌ কি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি? এই প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা সকলের কাছে।

সকল বাঙালির কাছে এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা হলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দেশবাসীরা তার ফিরে আসার জন্য দশকের পর দশক অপেক্ষা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ঘরে ফেরেননি তিনি। তাকে শেষ দেখা যায় ১৯৪৫ সালে ১৮ আগস্ট জাপানের তাইহোকু বিমানবন্দরে। তারপরেই তিনি নিখোঁজ। তাকে খোঁজার আপাদমস্তক চেষ্টা করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সকল চেষ্টাই বিফলে যায়।

কথা ছিল তিনি ফিরে এসে দেশের শাসনভার গ্রহণ করবেন নিজের হাতে, তবে তা আর হলো কই? তবে কি তিনি তাইহোকু বিমানবন্দর দুর্ঘটনায় মারা যান? সেই বিমানবন্দরে তার শেষ সঙ্গী ছিলেন আবিদ হোসেন। এমনকি তার সঙ্গেই নেতাজি জার্মানি থেকে জাপান উপকূলে ডুবোজাহাজে করে এসেছিলেন। বিমানবন্দর দুর্ঘটনায় তিনি বেঁচে ফিরে আসেন। তাকে নেতাজির কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। সারা জীবনেও তিনি কোন উত্তর দেননি।

দেশ স্বাধীনের এতদিন পরে এসেও কেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের নিখোঁজ হওয়া বা মৃত্যুর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি? তাহলে কি এর পিছনেও আছে কোন রাজনৈতিক কারণ? ১৯২০, দশকে সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সহযোগী। তিনি স্বরাজ দল গঠন করেছিলেন কারণ তিনি মনে করতেন যে কোন উপায়ে দেশ স্বাধীন করতে হবে। তবে ১৯২৫ সালের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস মারা যান এবং ভারতীয় কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে দলে আসেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি অহিংসা ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন অহিংসার আদর্শেই দেশ স্বাধীন হবে।

১৯৩০ সালে কংগ্রেসের মধ্যেই সমাজতন্ত্রী গোষ্ঠীর সূচনা হয় এবং ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে এই গোষ্ঠীর সভাপতি হন সুভাষচন্দ্র বসু। এই গোষ্ঠীতে নেতাজি, জহরলাল নেহেরু যুক্ত ছিলেন। নেতাজি এই গোষ্ঠী সভাপতি হওয়ার পর থেকেই গান্ধীজীর সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দেয় এবং মনে করা হয় যে, নেতাজি সহিংসার পথে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, জাতীয় কমিশন যে গঠন করেন তার পরিকল্পনার সঙ্গেও গান্ধীজীর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মতবিরোধ দেখা যায়। এছাড়াও নেতাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় তিনি দেশের ভিতরে জার্মানির দূতাভাসের সঙ্গে দেখা করতেন।

এরপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের চরম বিরোধী হয়ে ওঠেন গান্ধী, প্যাটেল ও রাজেন্দ্রপ্রসাদ। তারপরেও ১৯৩৯ সালে পতবভি সীতারামাইয়োকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো কংগ্রেসের সভাপতি হন তিনি যদিও তাকে বাধ্য করা হয় সেই পদ ত্যাগ করতে তারপরে ১৯৪০ সালে ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করেন তিনি। ১৯৪১ সালে ছদ্মবেশে দেশ ছাড়েন নেতাজি। কাবুল ও রাশিয়া হয়ে জার্মানিতে পৌঁছান তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জহরলাল নেহেরু জানান তিনি অস্ত্র দিয়ে জাপানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। সেই সময়ে প্রশ্ন ওঠে কংগ্রেস কি তাহলে সহিংস পথে যাবে?

লালকেল্লায় বিচার হয় আজাদ হিন্দ বাহিনীর। পরবর্তীকালে বহু তথ্য প্রকাশ করা হলেও তাইহোকু বিমানবন্দর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকায় সুভাষচন্দ্রের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। জহরলাল নেহেরুর নির্দেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা নেতাজির বাড়িতে কেন নজর রেখেছিলেন তা আজও জানা যায়নি। গুননামী বাবাকেও তার বাড়ির লোক মান্যতা দেয়নি।

দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি সম্পর্কে বহু তথ্য প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন তবে সেই তথ্যে নেতাজির মৃত্যু প্রসঙ্গে কোন কথা পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে জহরলাল নেহেরুর বোন বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিত রাশিয়ায় সুভাষচন্দ্র বসুকে দেখতে পাওয়ার ইঙ্গিত করেছিলেন তবে সেই কথাও ধামাচাপা দেওয়া হয়। তাহলে কি দেশকে সহিংসার পথে নিয়ে যাওয়ার জন্যই নেতাজির মৃত্যু বা নিখোঁজ সম্পর্কে ধামাচাপা দেওয়া হয়? নাকি নেতাজির ধারণায় তৈরি হতো এক অন্য ভারত, সেই কারণে এরম ঘটনা? তা দেশ স্বাধীনের এতদিন পরেও জানা যায়নি।