টাইটানিক ডোবার কারণ খুঁজতে গিয়ে নতুন রহস্যের উসঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদন : আজ থেকে দীর্ঘ ১০৮ বছর আগে টাইটানিক জাহাজ ডুবে গিয়েছিলো। কিন্তু আজও এটি একটি রহস্য। টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর এক সপ্তাহ ধরে নিউ ইয়র্ক টাইমসে ৭৫ পাতা নিয়ে শুধু টাইটানিকেরই খবর বের হয়েছিলো। কারণ এটি ছিল প্রথম জাহাজ যা হিমশৈলের ধাক্কায় সলিল সমাধি হয়েছিল।

টাইটানিকের কতগুলি আশ্চর্যজনক বিষয়

১) টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ফলে ১,৫১৪ মানুষ মারা যান। কিন্তু মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর মাত্র ৩৩৬টি দেহ উদ্ধার হয়েছিল।

২) টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর যাত্রীদের মধ্যে থেকে জাপানি একজন যাত্রী প্রাণে বেঁচে ছিলেন, তবে তিনি তীরে পৌঁছে দ্রুত বাড়ি ফিরে যান। তিনি তার সহযাত্রীদের কথা ভাবেননি বলে অভিযোগ করা হয়।

৩) টাইটানিককে স্বপ্নের জাহাজ বলা হয়। এই জাহাজের সবথেকে দামি টিকিটের মূল্য ছিল ৪,৩৫০ মার্কিন ডলার।

৪) এই জাহাজের তৃতীয় শ্রেণীতেই ছিলেন ৭০০ জন যাত্রী।

৫) টাইটানিকের ‘চিফ বেকার’ যিনি ছিলেন তিনি দুই ঘন্টা জলে পড়ে থাকার পরও বেঁচে গিয়েছিলেন। কারণ অতিরিক্ত মদ্যপান করেছিলে তিনি। যার ফলে তার শরীর ছিল গরম।

এই জাহাজের ওই রকম পরিণতি কেন ঘটল তা নিয়ে আজও তদন্ত চলছে। সম্প্রতি সেই তদন্তেই একটি নতুন তথ্য উঠে এসেছে যার ফলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

তদন্তে স্পষ্ট যে ১৯১২ সালের ১৪ ই এপ্রিল এই জাহাজ ডুবে যাওয়ার পিছনে একমাত্র কারণ হিমশৈলের ধাক্কা নয়। এছাড়া আরও কারণ ছিল।

সে রাত্রে অসংখ্য যাত্রী নিয়ে প্রাসাদ আকৃতির জাহাজটি ইংল্যান্ড থেকে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে ডুবে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে এর কারণ হিসেবে জানানো হয়েছিল জাহাজটি সমুদ্রের নীচের বিরাট হিমশৈলে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়।

কিন্তু বর্তমানে গবেষক মিলা জিনকোভা জাবি বলেছেন যে, হিমশৈল ছাড়া অন্য কারণ ছিল এই জাহাজ ডুবে যাওয়ার পিছনে।

গবেষক মিলা জিনকোভার এই দাবি ‘ওয়েদার’ নামে একটি জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে। জার্নালে তিনি বলেছেন, “সুমেরু প্রভা বা অরোরা বোরিয়ালিসের প্রভাবে সেইদিন দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল টাইটানিক। যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।”

এছাড়া ওয়েদারে আরও বলা হয়েছে যে-ল, “১৪ এপ্রিল রাতে আকাশে কোন চাঁদ ছিল না। সুমেরু প্রভার আলোয় আলোকিত হয়েছিল চারপাশ। সৌর ঝড়ের প্রভাবেই এই সৌরপ্রভা তৈরি হয়। আর সৌর ঝড়ের তীব্রতা কখনো এতটাই বেশি হয় যে তা অরোরা বা সুমেরু প্রভা তৈরি করে ফেলে। এই সৌর ঝড় স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের উপরও ব্যাপক প্রভাব আছে এই সৌর ঝড়ের।”

গবেষণা পত্রে উল্লেখিত আছে যে, “টাইটানিক যেদিন ডুবে যায় সেই রাতেই উত্তর আটলান্টিক সাগরের ভূ চৌম্বকীয় ঝড়ের যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে।” গবেষকদের অনুমান এই ঝড়ের প্রভাবে জাহাজের দিক নির্ণয় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল। ভুল পথে চালিত হয় বরফের হিমশৈলের ধাক্কা খায় জাহাজটি। মিলা জিনকোভা জাবির মতে সৌর ঝড়ের প্রভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়েছিল। আর এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভাব পরার জন্যই নিকটবর্তী লা প্রভেন্সে টাইটানিকের বার্তা গিয়ে পৌঁছয় নি। এমনকি কার্পাথিয়ার কাছেও টাইটানিকের সঠিক অবস্থানের বার্তা গিয়ে পৌঁছায় নি।

কাকতালীয়ভাবে কার্পাথিয়ার ও কম্পাসের ভুলে টাইটানিকের কাছে গিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে এই জাহাজের সেকেন্ড অফিসার জেমস বেসেটের সেদিনকার লগবুকে শক্তিশালী আরোরা বোরিয়ালিসের উল্লেখ করেন। অর্থাৎ শুধুমাত্র হিমশৈলও নয়, সৌর ঝড় সুমেরু প্রভা এই সবের ফলে টাইটানিকের করুণ পরিণতি হয়েছিল।

যদিও এই গবেষণায় কিছু কিছু বিষয়ে অস্বচ্ছতা রয়েছে সেকথা গবেষক নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন। তবুও টাইটানিকের তদন্তে একটি নতুন দিক নির্দেশিত হল, এই নতুন তথ্য নিঃসন্দেহে চাঞ্চল্যকর।