পুলিশে কর্মরত ছেলের থেকে মিলে না সাহায্য, আদালতের দ্বারস্থ বৃদ্ধ বাবা-মা

লাল্টু : বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী তাঁর জীবনমুখী গানের মাধ্যমে বারংবার বাঙালি তথা দেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি একটি গান গেয়ে সকলের মন জয় করেছিলেন, ‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার, মস্ত ফ্লাটে যায়না দেখা এপার ওপার’। যে গানের মধ্যেই ফুটে উঠেছিল ছোট্ট এক সন্তানকে কোলে পিঠে মানুষ করে বড় করে তোলা, আর তারপর পরবর্তী পরিণতি। নচিকেতা চক্রবর্তীর সেই গানেরই বাস্তবায়ন দেখা গেল বীরভূমে। দেখা গেল এক বাবা-মায়ের কোলে পিঠে করে তার সন্তানকে মানুষ করা, সন্তান যখন সরকারি চাকরি জুটিয়ে অন্যত্র কর্মরত তখন বৃদ্ধ বাবা মাকে কোনরকম সাহায্য করাতে অনীহা। আর কোনো রকম সাহায্য না পেয়ে বাবা মা যখন অসহায় তখন বাধ্য হয়ে খোরপোষের জন্য আদালতের দ্বারস্থ।

জীবনমুখী সঙ্গীতকার নচিকেতা চক্রবর্তীর সেই গানকে বাস্তবায়িত করেছেন কলকাতার বিধাননগর পুলিশের কনস্টেবল মিঠুন দত্ত। তিনি ছোট থেকেই বীরভূমের দুবরাজপুর শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করে এখন থাকেন অন্যত্র, বলতে কর্মস্থলের কাছাকাছি কোনো শহরতলিতে। আর চাকরি পেয়ে রোজগারে সক্ষম হয়েও নিজের বৃদ্ধ বাবা-মাকে কোনরকম সাহায্য দিতে নারাজ ওই গুণধর ছেলে। সাহায্য বলতে আর্থিক হোক বা অন্যকিছু। এমনটাই অভিযোগ করেছেন মিঠুন দত্তের বাবা মা উত্তম দত্ত ও সোনালী দত্ত। সাহায্য দেওয়া তো দূরের কথা বরং ছেলে ও বৌমার কাছ থেকে প্রায় প্রতিদিনই ফোন আসে বৃদ্ধ দম্পতির সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে দেওয়ার জন্য।

বৃদ্ধ বাবা উত্তম দত্ত কর্মহীন ও প্রতিবন্ধী। নিজের সংসার চালানোর জন্য দুবরাজপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে থাকেন। আর বেসরকারি বাসগুলি থেকে দুই টাকা, পাঁচ টাকা করে পান যাতেই সংসার চলে। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে লকডাউন চলার কারণে এই রোজগার বন্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে আর্থিক সংকটের মাঝে একবেলা একমুঠো কোনভাবে খাবার জুটলেও আর একবেলা কাটছে অনাহারে। এলাকার অনেকেই এই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের পাশে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এসে দাঁড়ালেও তারাই বা কতদিন দেখবে! এমত অবস্থায় আর কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে উত্তম দত্ত ও তার স্ত্রী বৃহস্পতিবার দুবরাজপুর আদালতের দ্বারস্থ হন।

উত্তম দত্ত ও তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, “আমাদের এমন আর্থিক অনটনের কথা জেনেও আমাদের ছেলে কোনরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না। বরং ছেলে ও ছেলের বউ প্রায় প্রতিদিনই ফোন করে সম্পত্তি তাদের নামে লিখিয়ে দেওয়ার জন্য। আর এমনটা করে না দেওয়া হলে আমার মেয়ে ও জামাইয়ের ক্ষতি করবে বলে তারা জানিয়েছে।”

দুবরাজপুর আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পর ওই বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়ান আইনজীবী মল্লিকা দত্ত। এই মামলা চালানোর জন্য তিনি কোনো রকম খরচ নিচ্ছেন না ওই বৃদ্ধ দম্পতির থেকে। পাশাপাশি তিনি সমস্ত কিছু বিচার-বিবেচনা করে জানিয়েছেন, “ভারতীয় আইন বলছে বাবা মাকে দেখতে হবে তার সন্তানদের। সুতরাং এক্ষেত্রে মামলাকারী উপযুক্ত জায়গায় রয়েছেন। এখন দেখার বিষয় আদালত কি রায় দেয়।”