আঙ্গুলের ডগার সমান গীতা বানিয়ে নজির গড়লেন ইছাপুরের মুকুল বাবু

অমরনাথ দত্ত : ‘গীতা’, যা কৃষ্ণ ও পাণ্ডব রাজকুমার অর্জুনের কথোপকথন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগে শত্রুপক্ষে আত্মীয়, বন্ধু ও গুরুকে দেখে অর্জুন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় কৃষ্ণ তাকে ক্ষত্রিয় যোদ্ধার ধর্ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিভিন্ন প্রকার যোগশাস্ত্র শোনান। বৃহৎ সেই কথোপকথনের আঙ্গুলের ডগার সমান ০.৫ মিলিমিটার মাপের কয়েক হাজার গীতা বানিয়ে ‘মাইক্রোম্যান’ হিসাবে পরিচিত পেয়েছেন মুকুল দে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও তাঁর কাছে একটি ক্ষুদ্র গীতা নিয়েছেন। গীতা ছাড়াও ১, ২ মিলিমিটারের বাইন্ডিই ডাইরি তৈরিতেও দক্ষ তিনি।

মুকুল দে উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের বাসিন্দা। পেশায় তিনি রাইফেল ফ্যাক্টারির কর্মী ছিলেন। অবসর নেওয়ার আগে থেকে ক্ষুদ্র জিনিষ বানানোর প্রতি তাঁর নেশা জন্মায়। তাঁর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, একবার মেয়েকে একটি ডায়রি বানিয়ে দিতে গিয়ে এই নেশার জন্ম। তারপর ১৯৯৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার গীতা বানিয়েছেন তিনি। যার কোনটির মাপ ২ থেকে ৩ মিলিমিটার, কোনটির মাপ তারও কম। সর্বাধিক ছোটটির মাপ ০.৫ মিলিমিটার। ১০০ পাতার এই গীতায় রয়েছে ১৮ টি শ্লোকই।

বাংলা ও হিন্দিতে তিনি অতিশয় ক্ষুদ্র গীতাও বানিয়েছেন। এরপর ইংরাজিতে একটি গীতা লেখার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন মুকুলবাবু। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর এই কৃতিত্ব দেখে একটি গীতা সংগ্রহ করেন। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি বহু প্রদর্শনী করেছেন। ‘মাইক্রোম্যান’ হিসাবে মিলেছে স্বীকৃতিও। তিনি আরও জানান, গীতা ছাড়াও, মাইক্রো জোরাসিক পার্ক সহ অন্যান্য বই বানিয়েছেন। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বই, ডাইরি বানানোই তাঁর শিল্প ও নেশা।

মুকুলবাবু বলেন, “বিদেশে যাওয়ার ডাক পেয়েছিলাম। কিন্তু, অর্থের অভাবে যাওয়া হয়নি। তবে ভারতবর্ষে সমস্ত শহরে গিয়েছি। প্রদর্শনী করেছি, সংবর্ধনা পেয়েছি। এটাই আমার নেশা। এই শিল্প নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।”