তাপবিদ্যুৎ-এর বিষাক্ত ছাই পরিণত হচ্ছে জৈব সারে, ফলছে পুষ্টিকর শাক সবজি

হিমাদ্রি মন্ডল : স্কুলের মূল উদ্দেশ্য, জৈব সার ব্যবহার করে স্কুলের উদ্যান থেকেই ফলানো শাকসবজি ব্যবহার হোক স্কুলের মিড ডে মিলের জন্য। এই স্বপ্নকে পাথেয় করেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন কড়িধ্যা যদুরায় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীরা। স্বপ্ন দেখতে দেখতে সকলের নজরের আড়ালেই তা হয়ে যায় বাস্তবায়িত, যা পথ দেখাচ্ছে রাজ্যের অন্যান্য স্কুলগুলিকেও।

স্কুলের এমন উদ্যোগের পিছনে যার কৃতিত্ব অনস্বীকার্য তিনি হলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডক্টর কল্যাণ ভট্টাচার্য মহাশয়। দীর্ঘ উনিশ বছর ধরে তিনি স্কুলের উন্নয়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। শিক্ষকতার প্রথম জীবনে তিনি বোটানিতে এম.এ. করে লাল মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি বিষয়ে পিএইচডি করে যোগ দেন চৌহাট্টা হাইস্কুলে। তারপর ২০০০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কড়িধ্যা যদুরায় হাইস্কুলে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরই তাঁর স্বপ্ন দেখার ও স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। মিলতে থাকে একের পর এক সাফল্যও। যে সাফল্যের হাত ধরেই ২০১৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।

কড়িধ্যা যদুরায় হাইস্কুলের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। সেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষাক্ত ছাইকে কিভাবে সারে পরিণত করে বাগানের কাজে লাগানো যায় সে দিকে জোড় দেন তিনি। আর তারপর তারই উদ্যোগে স্কুলের বাগানে চলতে থাকে বেগুন, লাউ, কুমড়ো, পেঁপে নানান সবজি, শীতকালীন নানান ফসল, স্কুলের মধ্যে তৈরি করা হয় মাশরুম চাষের ব্যবস্থা। শুধু তাই নয় স্কুলের উদ্যোগে তৈরি করা হচ্ছে কেঁচো সার। বিষাক্ত প্যাথেনিয়াম দমন করে জৈব সার তৈরি করছে এই প্রধান শিক্ষকের উৎসাহে স্কুলের পড়ুয়ারা। শুধুই কি শাক সবজি! না, আরও একটু এগিয়ে স্কুলের পুকুরেই নিজস্ব উদ্যোগে চলছে মাছের চাষ। আর এসকল সব প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যায় স্কুলের প্রায় এক হাজার পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের পাতে।

এছাড়াও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে স্কুলের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে ভেষজ উদ্যান। যে উদ্যানে কম করে ৭০০ রকমের ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে। ৭০০ রকমের ভেষজ উদ্ভিদ থাকার পাশাপাশি প্রতিটি ভেষজ উদ্ভিদের পাশে রয়েছে একটি করে বোর্ড, যাতে লেখা রয়েছে ওই ভেষজ উদ্ভিদের নাম, বৈজ্ঞানিক নাম এবং উপকারিতা। এতে করে স্কুলের পড়ুয়ারা যেমন ভেষজ উদ্ভিদ চিনতে সক্ষম হচ্ছে এবং তাদের গুনাগুন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ হচ্ছে। আর এই রকম ১ টি স্কুলের ঘেরা বাউন্ডারির মধ্যে এত কিছু পেয়ে স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেদের স্কুল নিয়ে গর্ব তো করেই, পাশাপাশি এই স্কুল রাজ্যের অন্যান্য স্কুল গুলিকে এগিয়ে যেতে পথ দেখাচ্ছে।