‘এক দেশ এক ভোট’ সময়ের অপেক্ষা! বিরোধিতায় বিরোধীরা

নিজস্ব প্রতিবেদন : ২০১৪ সালে কেন্দ্রে এনডিএ সরকার আসার পর তারা যে সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কার্যকর করে দেখিয়েছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাহুবলে। যে কারণেই এবার মনে করা হচ্ছে ‘এক দেশ এক ভোট’-ও লাগু হওয়া কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ ইতিমধ্যেই এই ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে সওয়াল-জবাব শুরু হয়েছে। যদিও এই প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ বিরোধিতায় বিরোধীরা।

বর্তমান করোনাকালেই নতুন করে এই ‘এক দেশ এক ভোট’ সম্পর্কিত বিতর্ক উস্কে দিতে দেখা গেল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তবে এই জল্পনাকে উস্কে দিলেও নির্বাচন কমিশন মনে করছে ‘এক দেশ এক ভোট’-এর বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব যখন সংবিধানের সংশোধন করা হবে। তবে এই সরকারকে সংবিধানের সংশোধন করতেও দেখা গিয়েছে একাধিকবার। উদাহরণস্বরূপ জ্বলজ্বল করছে ৩৭০।

দীর্ঘ কয়েক মাস ধরেই বিজেপি নেতাদের একাংশের মুখে শোনা যাচ্ছে এই ‘এক দেশ এক ভোট’-এর কথা। তারা লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন একসাথে করার পক্ষে সওয়াল করছেন। এমনকি গত বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখেও একই কথা শোনা গিয়েছিল। আর এরপর আবার সেই কথাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনা গেল সংবিধান দিবসে।

একসাথে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন সম্ভব হলে দেশের নির্বাচনের খরচ এক ধাক্কায় অর্ধেক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যান বলছে ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে দেশে লোকসভা নির্বাচনের জন্য খরচ হয়েছে যথাক্রমে ১,১১৫ এবং ৩,৮৭০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের মতে দুই নির্বাচন একসাথে হলে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আলাদা খাতে খরচ করার প্রয়োজন হবে না। খরচ কমার পাশাপাশি নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও যে বাধা বিপত্তির সৃষ্টি হয় তাও এড়ানো সম্ভব হবে। আর এসব সুবিধার কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ‘এক দেশ এক ভোট’ হয়তো এবার সময়ের অপেক্ষা।

তবে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতাদের একাংশের মুখে এমন কথা শোনা গেলেও বিরোধীরা এর বিরোধিতা করছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, এই পদ্ধতিতে কোন রাজ্যের শাসক দল যদি এক বছরের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলে তাহলে রাজ্যের ভবিষ্যৎ কি হবে? সেক্ষেত্রে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় রাজ্যের ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাশাপাশি তাদের আরও অভিযোগ, রাজ্যগুলির ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপির পিছন দরজা খুলে রাখা বন্দোবস্ত হলো এই পরিকল্পনা। বিজেপি দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চাইছে। আবার অনেকের মতে একসাথে গোটা দেশে নির্বাচনের জন্য যে পরিমাণ ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট প্রয়োজন হবে তা ভারতের হাতে নেই। পাশাপাশি এক নির্বাচনের প্রভাব অন্য নির্বাচনে পরার সম্ভাবনাও রয়েছে।

আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কেন্দ্রীয় দলগুলি সুবিধা পাবেন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াতে পারে যে আঞ্চলিক দলগুলির অস্তিত্ব ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। যে কারণে অর্থনৈতিক, সময় এবং সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে একসাথে দুই নির্বাচন সুবিধাজনক হলেও আপত্তির পথে দেশের একাধিক বিরোধীদল।