ঠিক কি উপসর্গের কারণে বন্ধ অক্সফোর্ড টিকার ট্রায়াল, রিপোর্ট দিলো অ্যাস্ট্রজেনেকা

নিজস্ব প্রতিবেদন : অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে গবেষক থেকে সাধারণ মানুষ সকলের মনের মধ্যেই একটা আশা ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি মহিলা স্বেচ্ছাসেবকের প্রতিক্রিয়া জানার পর সকলের মধ্যেই একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। গত এপ্রিল মাস থেকেই অক্সফোর্ড টিকার ট্রায়াল হয়। প্রথমে এই ভ্যাকসিন দুজনের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিজ্ঞানী এলিসা গ্রানাটো।

এরপর প্রথম পর্যায়ে কম সংখ্যক মানুষের শরীরে এই টিকার পরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০০০ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়। অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম দুই পর্বের ট্রায়ালের রেজাল্ট মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট প্রকাশ্যে এনেছিল। তারা তাদের সেই গবেষণাপত্রে জানিয়েছিল যে ১০৭৭ জন স্বেচ্ছাসেবক এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম। শরীরে টি-কোষ ও সক্রিয় রাখে। কোনো জটিল পার্শপ্রতিক্রিয়া এই ভ্যাকসিনের আপাতত দেখা যায়নি।

দুই পর্যায় ঠিকমতো উতরে যাওয়ার পর শুরু হয় তৃতীয় পর্যায় ট্রায়াল। যেখানে প্রায় ৩০ হাজার জনকে এই টিকা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ট্রায়ালের মাঝখানেই একটি অপ্রত্যাশিত খবর আসে। আর তারপর ট্রায়ালটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন অ্যাস্ট্রোজেনেকা। জানা যায় স্বেচ্ছাসেবক এক মহিলা ওই টিকার ডোজ নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংসদে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় সুরক্ষার জন্য এই মুহূর্তে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, অক্সফোর্ডের টিকা নেওয়ার পর ওই মহিলা স্বেচ্ছাসেবকের শিরদাঁড়ায় মারাত্মক ব্যথা হয়। ওই টিকার ডোজের ফলে নিউরোলজিক্যাল রোগের উপসর্গ দেখা যায়। ব্রিটিশ সুইডিশ ফার্ম অ্যাস্ট্রোজেনেকা অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় ডিএনএ ফ্যাক্টর ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল। এই টিকার ডোজে একজন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে অজানা রোগ দেখা গেছে। এমনটাই দাবি ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থার।

সংস্থার সিইও পাস্কাল সরিয়ট এই বিষয়ে জানান যে টিকার ইনজেকশন দেওয়ার কিছুদিন পর স্বেচ্ছাসেবক ওই মহিলার স্পাইনাল ইনফ্ল্যামেশন হতে শুরু করে। এরপর তার শরীরে তীব্র প্রদাহ শুরু হয়। মনে করা হচ্ছে যে তিনি ট্রান্সভার্স মায়োলিটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শিরদাঁড়ার দুপাশে যন্ত্রণা হয়, এছাড়া স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ুতে তীব্র প্রদাহ শুরু হয়। অনেক সময় এই রোগে স্নায়ু কোনো বার্তা আদান-প্রদান করতে পারে না, মস্তিষ্ক ও সংকেত পাঠাতে পারে না। এর সাথে সাথে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পেশীর ব্যথা, পেশির খিঁচুনি, ব্লাডার ও বাওয়েল সিনড্রোম, মাইগ্রেনও দেখা যায়। অনেকক্ষেত্রে রোগীর স্পর্শের অনুভূতি চলে যায় অর্থাৎ রোগী প্যারালাইসিস হয়ে যায়।অ্যাস্ট্রোজেনেকার মুখপাত্র ম্যাথিউ কেন্ট জানিয়েছেন, ওই মহিলা এখন অনেকটাই সুস্থ। হাসপাতাল থেকে তাকে ডিসচার্জ করা হয়েছে।

তৃতীয় পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে একজনের শরীরেই এরকম রোগ দেখা গেল কেন তা নিয়ে পরীক্ষা চলছে। একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী সোম্যা স্বামীনাথন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে নিষেধ করেছেন। তার কথায়, “নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই টিকার গবেষণা ও প্রয়োগ হয়। দুরারোগ্য কোন রোগের টিকা খুব সহজেই তৈরি হয়েছে এমন নজির নেই। শুরুতেই খামতিগুলো নজরে চলে এসেছে, এটা বরং ভালই হয়েছে। কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে সেগুলো জানতে পারা যাবে একইসাথে আগামীদিনের টিকার সুরক্ষা বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যাবে।”