বর্ধিত লকডাউনের সময় যা যা করবেন, ‘সপ্তপদী’ পরামর্শ দিলেন মোদী

নিজস্ব প্রতিবেদন : বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের হাতে আর কিছুই নেই একমাত্র লকডাউনকে মেনে চলা ছাড়া। আমরা করোনার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি ঘরে থেকেই। এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী লকডাউনের সময়সীমা বাড়ান। আগে যে সময়সীমা ১৪ ই এপ্রিল অবধি ছিল তা বেড়ে হলো ৩রা মে অবধি। এদিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অগ্নিপরীক্ষা ও ‘সপ্তপদী’র কথা বলেন।

হ্যাঁ, অগ্নিপরীক্ষা আমরা সবাই জানি যে সীতামা অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছিলেন। আগুনের মধ্যে হেঁটে গিয়েছিলেন তিনি। আমাদের কেউ একটা দায়িত্ব নিতে হবে। যেটা আগুনের মতই প্রচণ্ড দাবদাহ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে। আগুনের এই অসহ্য উত্তাপকে যদি আমরা সহ্য করতে না পারি তাহলে আমরা, আমাদের পরিবার, আমাদের রাজ্য ও আমাদের দেশ সমূলে বিনাশ প্রাপ্ত হবে। তাই আমাদেরকেই এই কঠিন দায়িত্ব নিতে হবে। হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০ই এপ্রিল অবধি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। ২০ই এপ্রিলের পর নতুন হটস্পট এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করা হবে। আর একবার কোন এলাকা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হলে সেই এলাকা থেকে মানুষকে আর বের হতে দেওয়া হবে না। তাই আমাদেরকে এই দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের এলাকাকে সুরক্ষিত রাখার। আমাদেরকেই দেখতে হবে আমাদের এলাকাটি যেন করোনার হটস্পটে চিহ্নিত না হয়। এই জন্য আমরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। ভীষণ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো যাবে না। বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক পরে বেরোবেন। বাইরে থেকে এসেই বাইরের পোষাক খুলে স্নান করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, “২০ই এপ্রিল অবধি আমাদের অগ্নিপরীক্ষা। এরপরই সরকার মূল্যায়ন করবে নতুন কোনও এলাকাতে করোনার হটস্পট তৈরি হল কিনা! যদি নতুন কোনো এলাকাতে করোনার‌ হটস্পট না হয়, সেক্ষেত্রে অল্প কিছু মানুষজন কিছু ছাড় পাবেন।” প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, “যে মুহূর্তে নতুন একটি এলাকায় করোনার পা পড়বে সেই সময় থেকেই যাবতীয় অনুমতি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।”

অগ্নিপরীক্ষার কথা বলে মোদিজি আসলে মানুষের মধ্যেকার উৎসাহকেই জাগিয়ে দিয়েছেন। আমরা সকলেই কমবেশি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। পর্যবেক্ষকদের মত অনুযায়ী মানুষের মধ্যেকার সুপ্ত সেই চ্যালেঞ্জিং মানসিকতাকেই তিনি জাগিয়ে দিয়েছেন সচেতনভাবে ওই শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী সাতটি পরামর্শ দেন কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য। একেই তিনি সপ্তপদী বলছেন। এই সাতটি নির্দেশ কী?

১) বাড়িতে থাকা বয়স্ক মানুষদের খেয়াল নিন। যেহেতু তাদের ইমিউনিটি পাওয়ার কম হয় এবং তারা নানা রোগে এমনি দুর্বল থাকেন। তাই তাদের করোনাতে আক্রান্ত হ‌ওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি থাকে। তার মানে এই নয় তরুণরা অপরাজেয়। বিগত দিনগুলিতে আমরা দেখেছি যে যুবকরাও সংক্রামিত হয়েছেন করোনাতে।

২) সীতা মায়ের করা ভুলের পুনরাবৃত্তি করবেন না। সীতা মা লক্ষণরেখা পেরিয়ে ভুল করেছিলেন। আপনি যেন লক্ষণরেখা পেরোবেন না। লক্ষণরেখা বলতে তিনি লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলছেন। এছাড়া বাড়িতে তৈরি করা হলেও তিনি মাস্ক ব্যবহারকে আবশ্যিক বলেছেন।

৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তিনি আয়ুষ মন্ত্রকের দ্বারা জারি করা ভেষজ পানীয় খেতে বলেছেন। এই ভেষজ পানীয় তৈরি করতে মধু, বাসক পাতা, তুলসী, লবঙ্গ লাগবে। এগুলি দিয়ে একসাথে ফুটিয়ে নিন।

৪) করোনা মোকাবিলায় সকলেই ‘আরোগ্য সেতু’ মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং অন্যদেরও এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে উৎসাহিত করুন।

৫) এই দুঃসময়ে যারা গরিব মানুষ তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের দিকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করতে হবে।

৬) ব্যবসায়ীদের তিনি অনুরোধ করেছেন এই লকডাউনের সময়ে যেন তারা কোনোরকম কর্মী ছাঁটাই না করেন।

৭) দেশের দুঃসময়ে যারা পরিষেবারত সেই সকল ডাক্তার, নার্স, সাফাই কর্মী, পুলিশকর্মীদেরকে সম্মান করতে হবে। সেই সকল করোনা যোদ্ধাদের জন্য মানুষকে গর্ব করতে বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “এই সপ্তপদীই একমাত্র বিজয়কে নিশ্চিত করতে পারে। তাই সকলেই নিষ্ঠার সাথে ৩রা মে অবধি লকডাউন পালন করুন। যিনি যেখানে আছেন তিনি সেখানে থাকুন। ঘরে থাকুন সুরক্ষিত থাকুন। এই কঠোর সংযমেই করোনাভাইরাস পরাজিত হবে।”

সর্বোপরি দেশের এই সংকটে যারা দেশের কথা ভেবে পরিবার থেকে দূরে আছেন, যারা লকডাউন মেনে ঘরে আছেন, তাদের ত্যাগ ও সংযমের প্রশংসা করেছেন।