‘আমাদের রক্ষা করুন’, ভিনরাজ্যে আটকে পড়া বাঙালিদের কাতর অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে

লাল্টু : একটা ভাইরাস যা ওলটপালট করে দিয়েছে বিশ্বকে, ওলটপালট করে দিয়েছে ভারতকে, ওলটপালট হয়েছে ভ্রমণপিপাসু বাঙালিরা। বাঙালিরা আজ আটকে পড়েছেন চার দেওয়ালের মধ্যে। আর সেই ভাইরাস হলো করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে ২১ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ২১ দিনের লকডাউনকে সমর্থন করেও অনেকেই ভিন রাজ্যে আটকে পড়ে অসহায় উদ্বেগের সাথে দিন কাটাচ্ছেন। তারা গিয়েছিলেন কেউ কাজের তাগিদে, কেউ আবার চিকিৎসা করাতে। তাদের হয়তো সেখানে থাকতে বাধা নেই কিন্তু অসুবিধা, উদ্বেগ, আশঙ্কা ন্যূনতম খাবার ও নুন্যতম চাহিদা নিয়ে।

লকডাউনের পরিস্থিতে এরকমভাবে চিকিৎসা করাতে যাওয়া অথবা শ্রমিকের কাজ করতে যাওয়া অজস্র বাঙালি আটকে রয়েছেন ভিন রাজ্যগুলিতে। যারা এই মুহূর্তে চরম সংকটে পড়েছেন, যেহেতু তাদের কাছে এখন কোন কাজ নেই। আবার যারা চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তারা চিকিৎসা খরচ ছাড়া হয়তো হাতে কিছু পরিমাণ টাকা নিয়ে গেছিলেন। কিন্তু দেশজুড়ে লকডাউন হয়ে পড়ায় তারা আর ফিরতে পারেননি। শ্রমিক থেকে চিকিৎসা করাতে যাওয়া ওই মানুষগুলির টাকাপয়সা ধীরে ধীরে শেষ হতে শুরু করেছে। আমাদের রাজ্যের মত সেখানেও দোকানপাট বন্ধ, খোলা রয়েছে নাম মাত্র কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করার মত দোকান। জিনিসপত্র কিনতে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে অজানা জায়গায়। এমনকি বাড়ি থেকে হওয়ার উপরেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। যে কারণে আশঙ্কায় দিন কাটছে, যেটুকু হাতে আছে সেটুকু শেষ হয়ে গেলে আগামী দিনে কি হবে?

এমনই আশঙ্কায় দিন কাটছে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের গড়গড়া গ্রামের জয়ন্ত ঘোষ ও তার পরিবারের। তারা গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে তাদের সন্তান ৯ বছরের রূপমের চিকিৎসা করাতে যান ব্যাঙ্গালোর। রূপম হাঁটাচলা করতে পারত না। সেখানে তার অপারেশন হয়, সব রকম চিকিৎসা করাতে তাদের সময় লাগে ২০ মার্চ পর্যন্ত। তারপরেই জনতা কারফিউ, তারপরেই লকডাউন। এখন তারা আটকে রয়েছেন ব্যাঙ্গালোরের কাডুগুডি এলাকায়। (কাডুগুডি, পোস্ট অফিস হোয়াইটফিল্ড, পিন কোড ৫৬০০৬৭)।

একইভাবে আরও পাঁচজন শ্রমিক যারা কাজের জন্য গিয়েছিলেন দক্ষিণ কর্নাটকে। সেখানে আটকে পড়েছেন বীরভূম ও নদীয়ার গৌতম সাহা, অসিত সাহা, সুপ্রিয় মন্ডল, কিশোর দাস, আরিয়ান চ্যাটার্জী। লকডাউনের পরিস্থিতিতে তারা কাজ হারিয়ে গৃহবন্দী। বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। কাজ হারিয়ে হাতে থাকা টাকা পয়সাও শেষের দিকে। তারা এই মুহূর্তে রয়েছেন দক্ষিণ কর্ণাটকের জর্ড কৃষ্ণপুরে। পোস্ট অফিস নারাসাপুরা, জেলা কোলার, পিন কোড ৫৬৩১৩৩।

তাদের অভিযোগ, “আমরা যে সংস্থায় কাজ করতে এসেছিলাম লকডাউনের কারণে সেই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। হাতে টাকা পয়সা নেই। এখানকার পুলিশ কোনমতেই বাজারে বের হতে দিচ্ছে না। এমনকি আমরা ভিন রাজ্যের হওয়ায় রেশন বা অন্যান্য ব্যবস্থার কোনো রকম সুবিধা পাচ্ছিনা। পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছে আমাদের অনাহারে দিন কাটাতে হবে।”

এইভাবে আটকে পড়া এই সকল শ্রমিক ও চিকিৎসা করাতে যাওয়া মানুষগুলি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। তাদের প্রার্থনা, মুখ্যমন্ত্রী যেনতেন প্রকারে তাদের যেন উদ্ধার করেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই দেশের ১৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দিয়েছেন তাদের রাজ্যগুলিতে আটকে পড়া বাংলার মানুষগুলির যেন একটু হলেও দেখভাল করেন।