যুবককে ফোন রতন টাটার, সঙ্গে চাকরির প্রস্তাব!

নিজস্ব প্রতিবেদন : রতন টাটা, একাধারে বিশিষ্ট শিল্পপতি, আর অন্যদিকে সমাজসেবী। এমন ব্যক্তিত্বের অধীনে কাজ করার স্বপ্ন কার না থাকে। কিন্তু সুযোগ পাওয়া যায় কতটা! এরকম ব্যক্তিত্বের অধীনে কাজ করার সুযোগ স্বপ্নের মত। তবে কখনো ভাবতে পারেন স্বয়ং এমন ব্যক্তিত্ব নিজে ফোন করে কাউকে চাকরির সুযোগ করে দিচ্ছেন!

ভাবতে না পারলেও এমনটাই ঘটেছে। অনেকটা মেঘ না চাইতেই জল। ঠিক এরকমটাই ঘটেছে মুম্বইয়ের যুবক শান্তনু নায়ডুর সঙ্গে। রতন টাটা নিজে ফোন করে তাঁকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু এমনটা সম্ভব হলো কিভাবে? আমার আপনার মত সবার মনে এই প্রশ্ন জাগতে পারে।

আসলে ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে। সেসময় রতন টাটার সাথে একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল শান্তনুর। তারপর আর কোন যোগাযোগ নেই বিশিষ্ট ওই শিল্পপতির সাথে। তা সত্ত্বেও এলো চাকরির অফার তাও আবার রতন টাটার মত নিজস্ব সংস্থা থেকে।

শান্তনু একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে দেখতে পান, একটি কুকুর রাস্তায় পড়ে রয়েছে মৃত অবস্থায়। দেখেই বুঝতে পারেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই কুকুরটির। সেই ঘটনা শান্তনুকে নাড়িয়ে দেয়। ভাবতে শুরু করেন কিভাবে পথ-কুকুরদের এরকম দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করা যায়। দীর্ঘ ভাবনাচিন্তা আর বন্ধু-বান্ধবদের আলোচনার পর অবশেষে পৌঁছান সিদ্ধান্তে। তারপর বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতায় পথ পুকুরদের গলায় বসানোর চেষ্টা করেন এক ধরনের রিফ্লেকটর। যে রিফ্লেকটর রাতে আলো পড়লেই জ্বলজ্বল করতে থাকে, গাড়ি চালকরা দূর থেকে দেখেই বুঝতে পারেন তা। তাতে করে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যাবেন গাড়ি চালকরা। যাতে করে ঘনঘন দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচবে পথ কুকুররা।

শান্তনু ওই কাজের কথা টাটা গ্রপের নিউজ লেটারে পাবলিস্ট হওয়ার পরই ব্যাপক চাহিদা বাড়ে অত্যাধুনিক ওই কলারের। অনেকেই এই কলার কিনতে আগ্রহী হয়। কিন্তু চাহিদামত কলার সরবরাহ করা শান্তনুর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে সুরাহা! শান্তনুর বাবা শান্তনুকে পরামর্শ দেয় রতন টাটাকে এবিষয়ে চিঠি লিখে জানাতে। প্রথমে দ্বিধা বোধ করলেও শান্তনু একটি চিঠি লিখে পাঠায় রতন টাটাকে।

মাস দু’য়েক পর রতন টাটার কাছ থেকে সেই চিঠির উত্তর পাওয়া যায়। চিঠিতে শান্তনুকে দেখা করতে বলেন টাটা। মুম্বইয়ে রতন টাটার অফিসে গেলে রতন টাটা শান্তনুকে জানান, এমন কাজ দেখে তিনি অভিভূত। এমনকি, রতন টাটা নিজের পোষ‌্যদের সাথেও শান্তনুর দেখা করিয়ে দেন। পাশাপাশি দেন টাটা ট্রাস্টের হয়ে কাজ করার অফার। কিন্তু সেসময় শান্তনু মাস্টার্সের পড়াশোনা করতে তিনি বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। তাই শান্তনু দেখা করে ফেরার সময় টাটাকে প্রতিশ্রুতি দেন, মাস্টার্সের পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে অবশ‌্যই টাটা ট্রাস্টের হয়ে কাজ করবেন।

এরপর দেশে ফেরার পরই টাটা তাঁকে ফোন করেন আর বলেন, “আমার অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে। তুমি কি আমার সহকারী হিসাবে কাজ করতে চাও?” প্রথমে সেই ফোনের উত্তরে কি বলবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না শান্তনু। কিন্তু আবেগ সামলে সম্মতি দিতে আর দেরি করেননি শান্তনু।

সম্প্রতি ফেসবুকে ‘হিউম‌্যানস অফ বম্বে’-র পেজের দৌলতেই প্রকাশ্যে এসেছে শান্তনুর সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার গল্প। গোটা ঘটনা সামনে আসতেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল শান্তনু।