রেমডেসিভির প্রয়োগে ৩০% দ্রুত সুস্থ হয়েছেন করোনা রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদন : কোভিড-১৯ এমনই একটি ভীতির পরিবেশের সৃষ্টি করেছে যার ফলে লক্ষাধিক মানুষ বিশ্বজুড়ে মারা গেছেন কিন্তু তার থেকেও বেশি ভয় হল এই যে এই মারণ ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনো অব্দি আবিষ্কৃত হয়নি। প্রতিষেধক বের করবার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন গবেষকরা। এরপর হু-র ওয়েবসাইটে একটি রিপোর্ট নিরাশাকে আরও বেশি গভীরতর করে তুলল। এই রিপোর্টে বলা হয়েছিল করোনার নিরাময়ের ক্ষেত্রে চিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যবহৃত ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ পুরোপুরি ব্যর্থ। এই ওষুধটি নিয়ে একটি আশার আলো তৈরি হয়েছিল, এই ওষুধের এরকম একটি নেতিবাচক রিপোর্ট আসায় যেন সবাই মিলে আরও মুষড়ে গেলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই হু-এর ওয়েবসাইট থেকে এই তথ্যটি মুছে ফেলা হয় এবং পরবর্তীকালে হু এও জানায় যে রেমডেসিভির সংক্রান্ত পূর্ববর্তী ওই রিপোর্টটি ভুল।

জিলিয়াড সায়েন্সেস-এর তৈরি করা অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ‘রেমডেসিভির’ সম্পর্কিত রিপোর্টের খবরটি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ব্রিটিশ দৈনিক ‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’। এরপর হু-এর তরফ থেকে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে জানানো হয় যে, ভুল করে ওই খসড়া রিপোর্ট প্রকাশ্যে চলে এসেছিল।

এই একটি ভুল স্বীকারের পরই দেখা গেল যে করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ‘রেমডেসিভির’ নিয়ে তোলপাড় তৈরি হয়ে গেল পুরো বিশ্ব জুড়ে। ওষুধ প্রস্তুতকারী একটি মার্কিন সংস্থা ‘জিলিয়াড সায়েন্সেস’ দাবি করে, যে ভুলবশত রিপোর্টে চলে আসার জন্যই এই ড্রাগটি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা হয়নি। বরং এই ড্রাগটির কিছু সুফলও পাওয়া গেছে। এই সুফলগুলির ফলেই এই ড্রাগটি এখন এত বেশি পরিমাণে আলোচিত।

আসলে প্রথমে এই ড্রাগটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় চিনে। এই সময় চিনের পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল আমেরিকাতেও এই ট্রায়াল চলছিলো। এরপর এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলে অবিশ্বাস্য কিছু ফলাফল হাতে আসে, যার পর মার্কিন এপিডেমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফসি দাবি করেন, যে সকল করোনা সংক্রামিত রোগীদেরকে রেমডেসিভির দেওয়া হয়েছিলো, তারা অন্যদের চাইতে অনেক বেটার রয়েছেন। এমনকি তারা ৩০ শতাংশ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন অন্য সংক্রামিতদের থেকে। ফসির এই কথা থেকেই শুরু হয়ে যায় নতুন করে আলোড়ন। বৈজ্ঞানিকরা যেন খুঁজে পান আলোর দিশা।

চিন কী কারণে এইরকম একটি ভুল রিপোর্ট প্রকাশ করল?

এর উত্তরে ফসি বলেন, চিনে খুব অল্প মানুষের শরীরে ওই ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন ট্রায়ালে অনেক মানুষের শরীরেই এই ওষুধটি দেওয়া হয়। মার্কিন ট্রায়ালে আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ১০৬৩ জন রোগীর দেহে ওই ওষুধ দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে চিনে খুব অল্প সংখ্যক মানুষের ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়। তাই হয়তো চিন ঐ রিপোর্টটি ভুল করে ফেলেছিল।

রেমডেসিভির নিয়ে মার্কিন গবেষকদলের মধ্যে থাকা এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন অরুণা সুব্রহ্মণ্যম। তাঁর কথায়, “১০ দিনের সাধারণ চিকিৎসায় যেরকম ফল পাওয়া যাচ্ছে, ৫ দিনেই সেই ফল পাওয়া যাচ্ছে রেমডেসিভির প্রয়োগে।”

ফসির কথা অনুযায়ী, “রেমডেসিভির ব্যবহারের ফলে জানা যাচ্ছে, এই ওষুধটির স্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই সদর্থক প্রভাব রয়েছে রোগীর শরীরে। এই ওষুধের প্রয়োগের ফলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে।”

তবে শুধু এই কোভিডের ক্ষেত্রেই নয়। ইবোলা ভাইরাসের প্রতিরোধ তৈরি করতেও এই ওষুধের সফল প্রয়োগ হয়েছিলো। এরপর মার্স ও সার্স-এর সময়ও রেমডেসিভির সফল ব্যবহার করা হয়। তবে করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শুধু
রেমডেসিভিরই নয়, হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন, টোসিলিজুমাব, ফ্যাবিপিরাভিরের মতো ওষুধও ব্যবহার করা হচ্ছে। আসলে সব দেশে সব রকম ওষুধের যোগান ঠিকমতো নেই। আমাদের দেশে যেমন হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন-এর যোগান যেখানে ৮১ শতাংশ সেখানে রেমডেসিভির যোগান ৬০ শতাংশ। এবং অন্যান্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলির জোগান ৭৯ শতাংশ।

রেমডেসিভির ওষুধ নিয়ে আশায় আছেন কলকাতার চিকিৎসকরাও। ভারতে এই ওষুধের প্রয়োগের ক্ষেত্রে ICMR সবুজ সঙ্কেত দিলেই সরকারি ক্ষেত্রে এই ওষুধের ব্যবহার শুরু করা যাবে। তবে গত শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার এই রেমডেসিভির ব্যবহারে সবুজ সংকেত দিয়ে দেওয়ার মার্কিন দেশে করোনা চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহারের সরকারি নির্দেশও এসেছে। এখন ICMR কবে সবুজ সংকেত দেয় সেটাই দেখার!