লকডাউনে একদিনও বাড়িমুখো হননি এই নার্স, মন কাঁদলেও কর্তব্যে অবিচল

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলার সাথে সাথেই প্রথম সারির যোদ্ধারা অর্থাৎ চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ প্রশাসন ইনারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা টের পাচ্ছে বিশ্ব। দিনরাত এক করে এই সকল কর্মীরা নিজেদের কাজ চালিয়ে গিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরাচ্ছেন। আর বিনিময়ে অনেকক্ষেত্রে বিসর্জন দিতে হচ্ছে নিজেদের প্রাণ পর্যন্ত। ঠিক তেমনি এক নার্স রয়েছেন যিনি লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত বাড়িমুখো হননি। করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ওই নার্স।

যার কথা এতক্ষণ ধরে শুনলেন তিনি হলেন বীরভূমের সিউড়ির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স রিঙ্কু পাত্র। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব সহকারে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে যেতে আশা ছেড়ে দিয়েছেন বাড়ি ফেরার। এখন তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব বলতে সকলেই হাসপাতালে কর্মী, চিকিৎসক ও অন্যান্যরা। রিঙ্কু পাত্রের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নাতে। নার্সিং ট্রেনিং শেষ করার পর প্রথম পোস্টিং পান বীরভূমের সিউড়ির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। আর তিনি পোস্টিং পেয়েছিলেন ঠিক দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই। যে কারণে কাজে নেমে জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন।

রিঙ্কু পাত্রের বাড়িতে রয়েছেন বাবা-মা ও দাদা। তাদের সাথে বর্তমানে দেখা করা অথবা কথাবার্তা বলতে গেলে কেবলমাত্র মুঠোফোনেই। নার্সের কাজ করা অবস্থায় একটানা কাজ করে সবার ছুটি মেলে। নিয়ম মেনে ছুটি মেলে রিঙ্কুরও, কিন্তু পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে একা একা হোস্টেলে থাকতেইবা কতটা ভালো লাগে। যে কারণে ছুটির ফাঁকেও হাসপাতালে ছুটে আসেন সহকর্মীদের সাহায্য করতে। তার বেশিরভাগ সময় ডিউটি থাকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে। যেখানে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসার সময় ডাক্তারদের সাহায্য করা, কাগজপত্র তৈরি করা ইত্যাদি চলে অন্যান্যদের সাথে।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে মেয়ের এমন দূর প্রান্তে ভিন জেলায় ডিউটি করে যাওয়া বাবা-মায়ের মনকে কাঁদিয়ে ওঠে। ঠিক তেমনি কেঁদে ওঠে রিঙ্কুর মনও। আর তা ধরা পড়ে ফোনে কথা বার্তার সময়। তবে উপায় নেই, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে সবকিছু ছেড়ে নিজের ডিউটি পালন করতে হবে এটাই বাস্তব। বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সে এখন জানে অসুস্থ মানুষগুলিকে সুস্থ করতে হবে, এটাই তার কর্তব্য।