রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিনের নাম কি? কতটা নিরাপদ? কি দাবি পুতিন সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো দেখতে দেখতে আট মাস পেরিয়ে গেল। আর এই আট মাসে আশি অবস্থা বিশ্ববাসীদের। আট মাসেই কোটি কোটি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত আর প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে সাত লক্ষের কাছাকাছি। এমত অবস্থায় পাখির চোখ একটা দিকেই, তাহলো ভ্যাকসিন। এই আট মাসের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার পুতিন সরকারের তরফ থেকে জনসাধারণের জন্য কোভিড ভ্যাকসিন আনার দাবি করা হলো। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া প্রথম তাদের আনা ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের সম্মতি দিলো। যদিও এই ভ্যাকসিন নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা অনেকেই দাবি করেছেন, এই ভ্যাকসিন বাজারে আনার ক্ষেত্রে নাকি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পূর্ণাঙ্গ পর্যায় মানা হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করতে রাশিয়া নাকি তাড়াহুড়ো করে এই ভ্যাকসিন বাজারে এনেছে। যার পরেই এই ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌঁড়ে প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিল অক্সফোর্ড-মডার্ণার মতো ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা। কিন্তু এরই মাঝে সকলকে তাক লাগিয়ে উঠে এলো রাশিয়ার নাম। রাশিয়ার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি। আর এই ভ্যাকসিন মঙ্গলবার মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, তিনি তাঁর মেয়ের দেহে এই ভ্যাকসিন দিয়েছেন।

রাশিয়ার আবিষ্কৃত প্রথম করোনা ভ্যাকসিনের কি নাম?

রাশিয়ার মস্কোর গামালেয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি এই ভ্যাকসিনের নাম হলো স্পুটনিক ভি (Sputnik V)।

কিভাবে এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে এবং কিভাবে কাজ করবে?

সার্স-কোভ-২ অ্যাডেনোভাইরাস ডিএনএ-এ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে রাশিয়ার এই ভ্যাকসিনটি। এই ভাইরাসকে ল্যাবে বিশেষভাবে দুর্বল করে এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে এই ভ্যাকসিন মানবদেহ প্রবেশ করে নিউট্রোফিল, ইউসোনোফিল, বেসোফিলকে কাজে লাগিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক গামালেয়া ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ সংবাদ সংস্থাকে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, যেভাবে এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে তাতে ডিএনএ মানব শরীরে প্রবেশ করে কোনরকম ক্ষতি করতে পারবে না।

ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কোন কোন পর্যায়ের মেনে চলা হয়েছে?

এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ের যে রিপোর্ট সেই রিপোর্টই কেবলমাত্র সামনে এনেছিল রাশিয়া। যে রিপোর্টে বলা হয়েছিল এই ভ্যাকসিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে অর্ধেক জনকে ভ্যাকসিনের লিকুইড ফর্ম এবং অর্ধেক জনকে ভ্যাকসিনের পাউডার ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। এরপর জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল এই ভ্যাকসিনের কোনরকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এরপর আগস্ট মাসের ৩ তারিখ রাশিয়ার ওই ইনস্টিটিউটের তরফ থেকে জানানো হয় তাদের ট্রায়াল শেষ হয়েছে। কিন্তু ট্রায়াল শেষ হলেও তিনটি পর্যায়ে মানা হয়েছে কিনা তা জানানো হয়নি। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, গত আড়াই মাস ধরে মানব শরীরে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। যদিও বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য, আমেরিকাকে টেক্কা দিতেই রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত। আর এই ভ্যাকসিনের এখনও প্রয়োজন রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছাড়পত্র।