নিজস্ব প্রতিবেদন : অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে অভাব দারিদ্র্যতার সম্মুখীন হয়েই মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে। আসলে জীবনে ঠক্কর খাওয়া মানুষ বিলাসী মানুষদের চাইতে সর্বদায় এক ধাপ এগিয়ে থাকে। আর আজন্ম লড়াই করতে করতেই মানুষের মধ্যে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা জন্মায়। ঠিক যেমন জুতো সেলাই করতে করতেও জ্ঞানার্জনের প্রতি প্রবল আগ্রহকে হারিয়ে ফেলেনি উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সঞ্জয়।
বাবা মারা যাওয়ার পর গোটা সংসারের হাল এসে পড়ে তার ছোট্ট কাঁধে। তার বয়সী ছেলেরা যখন মাঠে ফুটবল খেলতে যেত সে তখন রাস্তায় বসে পড়তো জুতো পালিশ করতে। সংসারের খরচ আর জুতো পালিশের মধ্যে খানেই বাঁচিয়ে রেখেছিল তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে।
জন্মের এক বছর পরই বাবাকে হারিয়েছিল সঞ্জয়। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য মা নিয়েছিলেন পরিচারিকার কাজ। আর সঞ্জয় পঞ্চম শ্রেণীতে উঠতে না উঠতেই চটি সেলাই, জুতো পালিশ করে সংসারের হাল ধরে ফেলে। চাঁচলের ১ নম্বর ব্লকের কনুয়া মধ্যপাড়ার রাস্তার মোড়ে বসেই সে জুতো সেলাই করে। প্রতিদিন তার আয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এই টাকাটুকুই তার সম্বল। এই টাকা দিয়েই চলে পড়াশোনার খরচ। কনুয়া ভবানীপুর হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর সঞ্জয়, আঠারোর সদ্য কিশোর সঞ্জয়, জুতোর পালিশের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের লড়াইটাও চালিয়ে গেছে সমানতালে।
না, কোনো গৃহশিক্ষক ছিলো না তার। একা একা পড়েই মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিল সঞ্জয়। আর তার উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট মাধ্যমিকের রেজাল্টকেও ছাপিয়ে গেছে। এবার উচ্চমাধ্যমিকে সঞ্জয় রবিদাস পেয়েছে ৯০% নম্বর। তার রেজাল্টের এই নম্বর তার মেধাকেই প্রমাণ করে। বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৯৪, ভূগোলে ৯৩, দর্শনে ৮৭, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৭৬, ইতিহাসে ৯১ পেয়েছে সঞ্জয়। সবথেকে আশ্চর্যের কথা সঞ্জয়ের স্কুলে একমাত্র সেই ‘স্টার’ পেয়েছে! বন্ধুদের থেকে ধার করে বই নিয়ে, নোট সংগ্রহ করে সে প্রমাণ করে দিলো ইচ্ছা থাকলে প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়েও জ্ঞান অর্জন সম্ভব।
মালদহের সঞ্জয় রবিদাস, পিতৃহারা এই ছেলের একটাই স্বপ্ন মাথা উঁচু করে সমাজের বুকে দাঁড়ানো। দারিদ্রকে জয় করে এতদিনের লড়াইকে সার্থক করে একটা সরকারি চাকরি পাওয়া। আজ তার চোখধাঁধানো রেজাল্টই তার লড়াইয়য়ের সবথেকে বড় রসদ। লড়াইটা তো তাকে করতেই হবে। আমরা বিশ্বাস রাখি আগামীদিনে সঞ্জয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন সার্থক হবে। তার লড়াই সকলকে শেখাবে আদপে কোন কাজই ছোট নয়।
উল্লেখ্য, লকডাউনে জুতো সেলাইয়ের কাজ বন্ধ থাকায় আর সকলের মত সঞ্জয়ও আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। এই সময় রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তাকে আর্থিক সাহায্য পাঠান। সঞ্জয়ের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন মালদহ জেলা পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম।