দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে রাজ্যের একমাত্র প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মী মন্দিরে নজরকাড়া সার্বজনীন পূজো

নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজ্য জুড়ে সার্বজনীন দুর্গা পুজো বা কালী পুজোর ছড়াছড়ি। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে থেকে একটা আস্ত গ্রাম সহ দুই সীমান্তবর্তী জেলার ৫১ টি গ্রামের সার্বজনীন লক্ষ্মী পুজো হয় বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের ঘোষ গ্রামে।

কারন একটাই ওটা যে মা লক্ষ্মীর গ্রাম। সারা গ্রাম জুড়ে কোথাও কোন বাড়িতে পৃথক করে লক্ষী পুজো হয় না। শুধু তাই নয়, কোজাগরী পূর্নিমার রাতে শঙ্খের আওয়াজ ও এখানে নেই। গৃহস্থ পরিবার কেউ বাড়িতে লক্ষ্মীর ঝাঁপিও রাখে না। গ্রামের বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো করাই নিষিদ্ধ এই গ্রামে। কারন মা লক্ষ্মী এখানে সার্বজনীন লক্ষ্মী মন্দিরে বারোমাস পূজিতা হন। শুধু তাই নয়, সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র প্রাচীন প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মী মন্দির এই গ্রামেই।

বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ১নং ব্লকের বরধিষনু এই ঘোষ গ্রামের লক্ষ্মী মন্দির ঘিরে মিথের ছড়াছড়ি। লক্ষ্মী মা এখানে শুধু কোজাগরীতেই নন, তিনি এখানে নিত্য পূজিতা। প্রচলিত মিথ অনুসারে এই মূর্তির প্রতিষ্ঠাতা কামদেব ব্রহ্মচারী। আনুমানিক ৫০০ বছরের আগে দয়াল ঘোষ নামে এক চাষী গ্রামের পূর্ব দিকের কাঁদরের পাশের জমিতে কৃষিকাজ করছিলেন। ওই সময় কাঁদরে ভেসে আসে সুদৃশ পদ্ম। ছেলে বায়না ধরলে, ওই ফুল তুলতে গিয়ে হতাশ হন দয়াল। রাত্রে মায়ের স্বপ্নাদেশ পান, ‘আমি ঘোষগ্রামের মা লক্ষ্মী, নিরাকার রূপে আছি, আমাকে সাকার রূপে প্রতিষ্ঠিত করো।’ স্বপ্নাদেশ পেয়ে দয়াল বলেন ‘অজ্ঞ কৃষক আমি, কেমন করে করবো।’ মা বলেন, ‘তোকে সাহায্য করবে আমার সাধক কামদেব ব্রহ্মচারী।’ সেই মতই কোজাগরী পূর্ণিমার স্নিগদ্ধ প্রভাতে ঢাক ঢোল হরিনাম সহযোগে হয় মায়ের দারু মূর্তির প্রতিষ্ঠা। এরপর কাঁদির রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র সিং ওরফে লালা বাবু মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন।

বর্তমানে ওই মন্দির ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়ায় ওই স্থানে সেবায়েত তরুণ ব্যানার্জীর উদ্যোগে বহু বহিরাগত ভক্তদের দানে ও মন্দিরের সেবায়েত গনের সাধ্যমত দানে প্রায় দেড় কোটি টাকার অর্থ ব্যয় নতুন মন্দির তৈরি হয় ও গত ১৪২৪ বঙ্গাব্দের ১১ই চৈত্র নতুন মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করেন কৃষিমন্ত্রী আশিস ব্যানার্জী।

১৩৫৬ বঙ্গাব্দে মায়ের নব কলেবর হয়। সেই মূর্তিই বর্তমানে পূজিতা। ৪ বছর পর পর মায়ের অঙ্গরাগ হয়। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোয় মন্দির চত্ত্বরে নয়টি ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের সামনে হয় বিশেষ পুজো ও মহাযজ্ঞ। আহুতি দেওয়া হয় ১০৮ টি ক্ষীরের নাড়ু। তারপর হয় প্রসাদ বিতরণ। সারাদিন চলে হরিনাম সংকীর্তন। দূর দুরান্তের ভক্তের ঢল মন্দির চত্ত্বরে লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও পৌষ মাসের চারটি বৃহস্পতিবার মেলা বসে। রকমারী কড়ির পসরা নিয়ে বসে কড়ির মেলা।

দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই লক্ষ্মী মন্দির, গ্রামেই বহু প্রাচীন লক্ষ্মী মায়ের দারু মূর্তি আছে। প্রাচীন এই দারু মূর্তি থাকায় গ্রামের কোনো বাড়িতে আলাদা করে লক্ষ্মীপূজো হয় না, হয় না লক্ষ্মী মূর্তিও। স্থায়ী লক্ষ্মী মন্দিরেই লক্ষ্মী আরাধনায় মাতেন গ্রামবাসী।