ম্যাল-টাইগার হিল অনেক হল, এবার ঘুরে আসুন দার্জিলিংয়ের এই তিন অফবিট জায়গা

দার্জিলিং (Darjiling) জেলায় এমন অনেক জায়গা আছে যে জায়গার নাম সকলে শোনেননি অথচ সেই জায়গায় পৌঁছলে মায়ায় জড়াবেন অবলীলায়। বেড়ানো মানে ভিড়, রোজের ছুটে চলা, একই কাজ, ট্রামে বাসে ঝুলে গন্তব্যে পৌঁছনো আবার হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরা এসমস্ত কিছুর থেকে ছুটকারা। এই পাহাড়ি গ্রামগুলোয় আছে দু দন্ড শান্তি, নির্জনতা, উন্মুক্ত প্রকৃতি , বিশুদ্ধ বাতাস আর আনন্দ।

১) তিঞ্চুলে (Tinchule) – পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম হল এই তিনচুলে। সবুজে মোড়া এই গ্রাম অনেকটাই শহুরে সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন। বাঙালির কাছে দ্রুত গতিতে পাহাড়ের যে অফবিট জায়গা গুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে তিঞ্চুলে অন্যতম।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ছয় হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রাম রয়েছে কালিম্পংয়ের দিকে চেয়ে। আর কাঞ্চনজঙ্ঘা তো দাঁড়িয়েই রয়েছে এই গ্রামগুলিকে দেখাশোনার জন্য। এই গ্রামে যদি আপনি একবার গিয়ে পৌঁছান, তাহলে আপনার চোখে শুধু ধরা দেবে সবুজ প্রান্তর। কারণ ছোট ছোট তিনটি পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড়ি গ্রাম। আর তিনটি পাহাড় নাকি দেখতে অনেকটা চুল্লির মত, আর সেই কারণেই এই গ্রামের নাম তিঞ্চুলে।

২) ধোত্রে (Dhotrey) – পাহাড়, জঙ্গল, মেঘ, বৃষ্টি, নির্জনতা যেন জড়াজড়ি করে রয়েছে এই গ্রামে। পাহাড়ি পথে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে শুধু হাসিমাখা মুখ। যেন পৃথিবীর সব সুখের ঠিকানা এই গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহাড়ের এই ছোট্ট গ্রাম এক কথায় মেঘের মুলুক। গ্রামের নাম ধোত্রে।
দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যানের মধ্যেই এই গ্রাম। গ্রামের নানা দিক থেকে যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই চোখে পড়ে সবুজ। শুধুমাত্র গগনচুম্বী পাইনের ঘন জঙ্গলের জন্যই নয়, পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সাজানো প্রতিটি বাড়ির চাল সবুজ রঙের টিন দিয়ে ঢাকা, যার জন্য এই গ্রামের আরেক নাম ‘গ্রিন ভিলেজ’। সমুদ্রতল থেকে সাড়ে আট হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ি সবুজ গ্রাম ধোত্রে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ছোট্ট এই গ্রামের বাসিন্দা সাকুল্যে ৫০ টি পরিবার। সব বাড়ির সামনে একচিলতে জমিতে গাজর, বিন, মটরশুঁটি, আলু আর কপির চাষ হয়। পাইনগাছের ঘন বনে রয়েছে পাখির কলতান। রয়েছে ভাল্লুক, রেড পান্ডার আনাগোনা। রয়েছে অপরিসীম নির্জনতা আর সঙ্গে রয়েছে তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা। দিনের বিভিন্ন সময়ে নানা রঙে আবির্ভূত হন তিনি। রঙের খেলায় মনে হবে স্বয়ং বুদ্ধদেব আপনার সামনে শুয়ে রয়েছেন। তবে শুধু গ্রীষ্মে বা শরতে নয় ভরা শীতে ধোত্রেতে তুষারপাতের অভিজ্ঞতাও আপনাকে মুগ্ধ করবে।

৩) তাকদা (Takda) – দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত এই তাকদা তার নামের মতোই সুন্দর। তাকদার সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা হল অর্কিড হাউস ব্রিটিশ আমলের বেশ কিছু হেরিটেজ বাংলো আছে এখানে, যাদের বয়স কম করে একশো পূর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া লামাহাট্টা, দুরপিন, পেশক, মংপু, ছোটো মাংওয়া ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর হ্যামলেট তাকদার কাছেই অবস্থিত।

লেপচা ভাষায় নাকি তাকদা শব্দের অর্থ মেঘে ঢাকা বা কুয়াশায় ঘেরা । এখানে নেমে আসে কুয়াশা যখন তখন, তারপর সবুজ চা বাগিচা, বড়ো বড়ো পাইন গাছের সারি, পাথুরে সুপ্রাচীন রাস্তা, ইতিহাসের গন্ধ মাখা ব্রিটিশ বাংলো তখন ঢেকে যায় কুয়াশা চাদরে। মেঘও ঘিরে ফেলে সবুজ ঢেউ খেলানো চা বাগান, পাহাড়ি উপত্যকা। এছাড়া রয়েছে ‘সোনপুর হাউস’, বিহারের বিখ্যাত সোনপুর মহারাজের এক সময়কার ছুটি কাটানোর বাংলো এটি।