রাজ্যের তৃণমূলের বিপুল সাফল্যের নেপথ্যে থাকা ৭ কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদন : গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে আসল পরিবর্তনের ডাক দেওয়া হলেও বাংলার জনগণ সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে প্রত্যাবর্তনের বিকল্পকেই বেছে নিলেন। যার পরেই অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর রাজ্য তৃণমূল অপ্রত্যাশিতভাবে বিপুল সাফল্যতা অর্জন করলো। তবে এই বিপুল সাফল্যের পিছনে কি কি কারণ রয়েছে তা খুঁজতে গিয়ে রাজনীতিক বিশেষজ্ঞরা মূলত ৭টি কারণ খুঁজে পেয়েছেন।

১) মুখ মমতা : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ করেই ২০১৬ নির্বাচনের মতো এবারও প্রতিদ্বন্দিতা করলো তৃণমূল। স্থানীয় নেতাদের ভাবমূর্তিকে আড়াল করে নিজের ভাবমূর্তিকে বাজি রেখেই ভোটের আগেই প্রতিদ্বন্দিতায় নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি মমতা নামটি পশ্চিমবঙ্গে একটি ব্র্যান্ড। আর এই ব্র্যান্ডের সামনে বিজেপির তরফ থেকে সমতুল্য কাউকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

২) ধর্মীয় মেরুকরণ : বাংলার রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগ তৃণমূল বিজেপি দুই পক্ষের বিরুদ্ধে থাকলেও বিজেপি নতুন প্রজন্মকে টানতে সক্ষম হলেও ৪৫ ঊর্ধ্বের ভোটারদের টানতে সক্ষম হয়নি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা। যোগী শাহ সহ একাধিক বিজেপি নেতাদের উগ্র হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী প্রচার বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায় বিজেপি শিবিরের কাছে।

৩) বাঙালি ও অবাঙালি : ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের নিখুঁত পরিকল্পনায় বাঙালি বনাম বহিরাগত লড়াই তুলে ধরার যে চেষ্টা করেছিল তৃণমূল তাতে তারা সক্ষম হয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা।

৪) দুয়ারে সরকার : ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের নিরাশাজনক ফলাফলের পর ভোটের দায়িত্ব নিয়ে প্রশান্ত কিশোর রাজ্যের স্থানীয় নেতাদের প্রতি জমে থাকা ক্ষোভ প্রশমিত করতে একের পর এক প্রকল্প দিদিকে বলো, দুয়ারে সরকার, পাড়ায় সমাধান ইত্যাদি রাজনীতির এই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সবার জন্য স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প তৃণমূলের জয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।

৫) মহিলাদের প্রাধান্য : প্রতিটি প্রকল্প যেমন কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তৃণমূল সরকার মহিলাদের আলাদা প্রাধান্য দিয়েছে। যে কারণে তৃণমূলের এই জয়ে মহিলা ভোট বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

৬) বাম কংগ্রেস ধরাশায়ী : বাম কংগ্রেস যতই ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরুক না কেন এবারের বিধানসভায় বিজেপিকে ঠেকাতে একমাত্র ধর্ম নিরপেক্ষ দল হিসাবে তৃণমূলকেই বেছে নিয়েছেন অধিকাংশ ভোটার। যে কারণে বাম-কংগ্রেস নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে এবং তৃণমূলের ভোট অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।

[aaroporuntag]
৭) করোনা : রাজ্যে ৮ দফা ভোটের ক্ষেত্রে শেষের দিকে হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর এই সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে তৃণমূল বারংবার নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপিকে কাঠগড়ায় তোলে। তাছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্যাকসিনের অভাব, অক্সিজেনের অভাবে প্রাণহানি ইত্যাদির জন্য সাধারণ মানুষ থেকে কেন্দ্র বিরোধীরা বিজেপিকে দায়ী করতে থাকে। পাশাপাশি পেট্রোল ডিজেল ও রান্নার গ্যাস এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি তৃণমূলকে জয় হাসিলে অনেকটাই সাহায্য করেছে।