দু দু’বার ক্যানসার জয়, আন্দোলনেও চাকরি ছিনিয়ে নিলেন সোমা

নিজস্ব প্রতিবেদন : এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে যখন নেতা মন্ত্রীদের ঘিরে ব্যস্ততা, সেই সময় হঠাৎ সবার নজর কেড়ে নেন বীরভূমের সোমা দাস। এসএসসিতে উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ এই সোমা। তবে রাতারাতি এইভাবে তার সবার নজর কেড়ে নেওয়ার পিছনে রয়েছে অন্য কারণ।

২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বসেন বীরভূমের নলহাটির আশ্রমপাড়ার সোমা দাস। সেই পরীক্ষার ফলাফল ২০১৮ সালে বের হলে দেখা যায় তিনি উত্তীর্ণ। তবে তার পরেও চাকরি মেলেনি তার। অন্যান্য চাকরিপ্রার্থীদের মতোই আন্দোলনে যুক্ত হন সোমা। কিন্তু সেই বছরই নভেম্বর মাসে তার শরীরে নানান লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জানা যায় সময় ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত।

ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েই সোমাকে তার পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন ১০ ঘন্টা ধরে চলত কেমো। এইভাবে ৬টি কেমো নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে সাড়ে সাত মাস পর বাড়ি ফেরেন তিনি। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই ফের দ্বিতীয়বারের জন্য তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এটি ছিল ফোর্থ স্টেট।

দ্বিতীয়বার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর সোমা পুনরায় মুম্বাই পাড়ি দেন। ফের একইভাবে শুরু হয় চিকিৎসা। নতুন করে ৬টি কেমো হতে হয় তাকে। পরে আবার সুস্থ হয়ে ৬ মাস পর বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। অন্যদিকে বারবার এইভাবে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা তাকে স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু তা অবশ্য এখনও তার করা হয়নি।

এই দুরারোগ্য চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। আর্থিকভাবে নিঃস্ব হলেও সোমার পাশে দাঁড়ান তার বন্ধুবান্ধবরা এবং তার শিক্ষক সুমিত মজুমদার। সোমার কথায়, সুমিত মজুমদার না থাকলে তিনি এসএসসি পরীক্ষাতে পাস করতে পারতেনই না, আবার এই দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তেন।

এই ভাবেই সোমা দু-দু’বার ক্যান্সার জয় করে শনিবার স্বাবলম্বী হলেন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর শনিবার তিনি বাংলা শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিলেন বীরভূমের নলহাটির মধুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বীরভূমের এই সোমা দেখিয়ে দিলেন, শুধু দুরারোগ্য ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া যায় এমনটা নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেও জয় ছিনিয়ে নেওয়া যায়।