মাথা ন্যাড়া করে ক্যান্সার আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ালেন সুদর্শনা তরুণী

নিজস্ব প্রতিবেদন : ক্যান্সার রোগীদের যন্ত্রণার শেষ নেই, শারীরিক কষ্ট, মানসিক দুশ্চিন্তা আরও কতকি! তবে এইসকল যন্ত্রণাগুলির মধ্যে বড় যন্ত্রণা হলো কেমোথেরাপির পর তাদের চুল উঠে যাওয়া। তখন তারা শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি আরও ভেঙ্গে পরে মানসিক ভাবে, বাড়ি বের হতেও চায়না লজ্জায়। আর এই সকল ক্যান্সার রোগীদের কথা ভেবে নিজের চুল কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নদিয়ার করিমপুরের বাসিন্দা সোমাশা মণ্ডলের।

সেই কাটা চুল ক্যান্সার রোগীদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত তাঁর। সোমবার একটি মুখ বন্ধ খামে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে তাঁর সেই কাটা চুল মু্ম্বইতে পাঠালেন বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের ওই ছাত্রী৷ আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভাইরাল নেটদুনিয়ায়৷

১৯ বছর বয়সী সোমাশা ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়াশুনো করেন বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজে। কিন্তু তাঁর মধ্যে হঠাৎ করে এমন চুল কেটে প্রবণতা আসে কোথায় থেকে। সে বিষয়ে তৃতীয়বর্ষের ওই ছাত্রী জানান, “রায়গঞ্জের তিতির নামে এক বাচ্চা মেয়ে রয়েছে, যাকে আমি কিছুদিন আগে দেখেছিলাম চুল ডোনেট করতে। তখন আমি জানতে পারি চুল ডোনেট হয় ক্যান্সার রোগীদের জন্য। তখন আমিও ঠিক করি চুল ডোনেট করবো। আমার পক্ষে এটা দেওয়া সম্ভব। কিছুদিন আগে বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে বলি সে কথা। প্রথমটায় একটু আশ্চর্য হলেও পরে তারা আমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। আমার বাবা যখন আপত্তি করেননি, তখন আমার সব জড়তা কেটে যায়। আমি মাথা মুড়িয়ে ফেলি।’

সোমাশা ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘ছোট থেকেই আমার বাবা চুল কাটতে দিত না। উনিশ বছর বয়স হল, আমি মাত্র দু’বার ন্যাড়া হয়েছি। যখন শুনলাম ক্যানসার পেসেন্টদের চুল ডোনেট করলে ওদের অনেক সাহায্য হবে, তখন আমারও ইচ্ছে হয় যে, আমিও চুল ডোনেট করব। কিছুদিন আগেই বাড়িতে গেছিলাম, তখন মা-বাবা দু’জনকেই বলেছিলাম যে, আমি আমার চুল ডোনেট করতে চাই ক্যান্সার পেসেন্টদের জন্য। বাবা একটু অবাক হয়ে গেছিল। তারপর বাবা উত্তর দেয়, ‘কবে ন্যাড়া করবি? আজকেই চল নিয়ে যাব।’ বিশ্বাস করুন, তখন আমি বল পাই ভীষণ। যে বাবা আমার চুল কাটা নিয়ে মায়ের সাথে ঝামেলা করত, সেই বাবা আমাকে নিজেই বলেছে। আমি আজকে ভীষণ খুশি ভীষণ। আর সবার কাছে একটাই অনুরোধ যে, যাদের চুল অনেক বড় তারা প্লিজ বারো ইঞ্চিমতো চুল ক্যানসার পেসেন্টদের ডোনেট করো।’’

সোমাশা গত সপ্তাহের শুক্রবার করিমপুর থেকে কলকাতা নিজের পড়াশুনার জায়গায় ফিরেছেন। তারপর শনিবার সে চুল কেটে যত্ন সহকারে খামে ঢুকিয়ে সোমবার সেই কাটা চুল মুম্বাইয়ে পাঠিয়ে দেয়।

তারপর তিনি বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। একজন সাধারণ মেয়ে হয়ে স্বপ্ন অসাধারণ, অনবদ্য। সমাজের পাশে তাঁর দাঁড়ানোর ইচ্ছাও প্রবল। সে এও জানিয়েছে, বড় হয়ে সে শিশুদের বিনামূল্যে পড়াতে চায়।