কেন চীনা পণ্য বর্জন করা উচিত, নতুন ভিডিও বার্তা সোনম ওয়াংচুকের

নিজস্ব প্রতিবেদন : চীনের আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব হতে দেখা গিয়েছে লাদাখের গবেষক সোনম ওয়াংচুক। তিনি বারংবার এই আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন। চীনা পণ্য বর্জনের বিষয়ে ভারতীয়দের সজাগ করে তুলতে চীন ও চীনা পণ্য নিয়ে তাঁর নানান বক্তব্য তুলে ধরেছেন ভিডিও বার্তায়। আর এবারও তিনি নতুন একটি ভিডিও বার্তা দিলেন দেশবাসীদের উদ্দেশ্য করে। তাঁর এই নতুন ভিডিও হলো ‘HELP ME CHANGE CHINA’। তিনি এই নতুন ভিডিওতে যা যা বলেছেন তা দেখে নেওয়া যাক।

সোনম ওয়াংচুকের বক্তব্য অনুযায়ী, পাহাড়ি মরুভূমির দেশ লাদাখ। দীর্ঘ হিমালয় পর্বত মালার কোল ঘেঁষে এর অবস্থান। শুষ্ক আবহাওয়া আর উচ্চতার জন্য এখানকার পরিবেশ খুবই ভিন্ন রকমের। চাঁদের ও মঙ্গল গ্ৰহের পৃষ্ঠের মতো দেখতে বলে কখনো কখনো একে মুন ল্যান্ডও বলা হয়। এছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস লাদাখ অঞ্চলকে বলা হয় ছোট্ট তিব্বত। বছরের বেশিরভাগ সময় এই এলাকা বাকি বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকে। তাপমাত্রা কখনো কখনো পৌঁছায় মাইনাস ৩০ ডিগ্ৰিতে।

সিন্ধু নদী ও ডার্ক মাউন্টেনের ওপারে আছে তিব্বতের সীমান্ত। যে তিব্বতকে দখল করে রেখেছে দীর্ঘকাল ধরে চীন। আপাত শান্ত এই সীমান্ত অঞ্চলকে ঘিরেই শুরু হয়েছে চীনের সঙ্গে ভারতের ভূমিখন্ড নিয়ে চাপানোতর। নিউক্লিয়ার অস্ত্রের অধিকারী দুই দেশ দাঁড়িয়ে আছে সামনাসামনি। শুরু হতে পারে যেকোন সময় যুদ্ধ। চীনের এই আগ্ৰাসনের পিছনে আছে তার জন বিক্ষোভ নিয়ে আভ্যন্তরীণ সমস্যা। সারা বিশ্ব যখন করোনা মহামারীর প্রকোপে বিপর্যস্ত তখন চীন সীমান্ত নিয়ে শুধু ভারতের সঙ্গে নয় ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, জাপানের বিরুদ্ধে আগ্ৰাসনের নীতি নিচ্ছে।

এর কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে করোনা মহামারীর কারনে চীনের অর্থনীতি টালমাটাল করছে। একনায়কতন্ত্রী এই রাষ্ট্রে কোন গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। মানুষের বিক্ষোভ বাড়ছে। সেই বিক্ষোভের অভিমূখ ঘুরিয়ে দিতেই চীনের এই নতুন কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৫২ থেকে ৬২ সালেও মাওয়ের চীন এই একই রকম আগ্ৰাসন নীতি নিয়েছিল। দুর্ভিক্ষে সেই সময় বহু মানুষ মারা গিয়েছিল চীনে। আর তখনই ভারত আক্রমণ করে তাঁরা। যে ভারত তাদের স্বাধীনতায় সহযোগিতা করেছিল।

স্বৈরাচারী এই চীনের বর্তমান শাসকদের আলোচনার টেবিলে আনা তখনই সম্ভব হবে যখন সারা বিশ্বের মানুষ চীনের দ্রব্য কেনা বন্ধ করবে। যদি না করা যায় তাহলে সামনের দিনে চীনের কাছ থেকে বড়সড় বিপদ আসতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সফটওয়্যার, হার্ডওয়ার, অ্যাপস, ব্র্যান্ডের জামাকাপড় যা খুব অল্প দামে চীন বিশ্বের বাজারে ছাড়ছে এবং কোটি কোটি টাকা সঞ্চয় করছে তা বন্ধ করতে পারলে চীনকে একটা বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য স্থাপনের চুতর খেলায় নেমেছে চীন। সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধরা পড়ছে তাঁর নানারকম আচরণে। তবে এই খেলা বহু পুরাতন।

বর্তমান চীনের ৬০ শতাংশ অঞ্চল দখল করা। স্বাধীনতার পর প্রথমে সে মঙ্গোলিয়ার দক্ষিণ অংশ দখল করে নেয়। এরপর পুরো তিব্বত এবং পশ্চিম অংশে মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশ। বাকি বিশ্ব এই সব দেখেও এতকাল চুপ করেছিল নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে। উন্নত বিশ্বের যেসব দেশ মুখে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার, বিশ্ব নিয়ম পালনের অঙ্গিকারের কথা বলে, তারাও তাদের দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে চোখ বুঝেছিল এতদিন। এখন ঘাড়ের কাছে চীন নিঃশ্বাস ফেলায় বিপদের আঁচ পড়েছে বাকি বিশ্বে।

টুইটার, ফেসবুক থেকে যাবতীয় অ্যাপ বন্ধ করে বাকি বিশ্বের সঙ্গে চীনের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। চীনের বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্রীতদাসের মতো জীবনযাপন করছে সমস্ত রাজনৈতিক অধিকার হারিয়ে। যারা দাবি করেছে তাদের মুছে দেওয়া হয়েছে চীরতরে। চীন বিশ্বজুড়ে এক মৃত্যু ফাঁদ তৈরি করেছে। বিভিন্ন দেশকে ঋণ দেবার নাম করে সেই সব দেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফ্রিকার জিবূতী সহ বেশ কিছু দেশ চীনের কলোনিতে পরিণত হতে চলেছে। এশিয়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে স্থলপথে, জলপথে যোগাযোগ বাড়িয়ে তুলছে। প্রথমে অল্প সুদে ঋণ দিয়ে এইসব দেশগুলো থেকে অর্থ ও সম্পদ শুষে নিচ্ছে চীন।
চীন কেমন করে এত অল্প দামে তাদের তৈরি প্রোডাক্ট বিশ্বের বাজারে সরবরাহ করছে। খুব সহজ তিনটে সহজ তিনটে কারণে। বিপুল জনসংখ্যার দেশ চীনে শ্রমিকের মাইনে যৎসামান্য। একনায়কতন্ত্র চীন প্রোডাক্টের উপকরণ সহজে জোগাড় করতে পারে। ভর্তুকি দিয়ে জিনিসের দাম কমিয়ে রাখতে পারে।

এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে পরিবেশ, জন আন্দোলনের ভয়ে কারখানা গড়তে পারেনা, চীনে সেখানে সহজে সরকারি সহায়তায় কারখানা গড়তে পারে।

প্রশ্ন উঠছে চীনের দ্রব্য যদি ব্যবহার না করি তবে এর পরিবর্তে কি আছে। প্রশ্ন এখানে পুঁজিবাদী চীন কৃত্রিম উপায়ে আমাদের নানা চাহিদা তৈরি করেছে। সেগুলো আমরা সহজে ছেড়ে দিতে পারি। এই মহামারী প্রমাণ করে খুব অল্পতেই আমরা বেঁচে থাকতে পারি।
চীনের প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে স্থানীয় তৈরি জিনিস ব্যবহার করতে পারি। তাতে আমরা স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারি।

একসময় চেম্বারলীনের ইংল্যান্ড হিটলারের জার্মানিকে তোষণ করতে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে এনেছিল। বাণিজ্যিক স্বার্থে চীনকে একইভাবে তোষণ করলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনা হবে। পথ একটাই বিশ্বজুড়ে চীনাদ্রব্য বয়কট। বিশ্বের বিপুল অর্থের ফলে চীনের কাছে পৌঁছাচ্ছে। সেই মুলধন দিয়ে অতি অল্পদামে তাদের প্রোডাক্ট বিশ্বের বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে বাঁধছে তাঁর নাগপাশে।