যাত্রীশূন্য বাস, খাঁ খাঁ রেলস্টেশন, ‘জনতা কারফিউ’-এ স্বতঃপ্রণোদিত সাড়া জনসাধারণের

হিমাদ্রি মন্ডল, অমরনাথ দত্ত ও লাল্টু : বিশ্বের পাশাপাশি ভারতেও করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার নিতে শুরু করেছে। প্রতিনিয়ত হু হু করে বেড়ে চলেছে এই ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। শেষ রিপোর্ট পাওয়া অব্দি ভারতে এই ভাইরাসের সংক্রমণে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ৩১৫, আর মৃত ৪। কলকাতাতেও এই ভাইরাসের সংক্রমনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪। সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই গতকাল ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট নামতে দেওয়া হয়নি ভারতে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ভিন রাজ্যের বাস পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ শুরু করেছে রেল দপ্তর। আর এরই মাঝে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে দেশজুড়ে ‘জনতা কারফিউ’।

বৃহস্পতিবার রাত্রি ৮টার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, “ভারত ও ভারতের নাগরিকরা এই মুহূর্তে কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছেন। আর এই পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের কাছে দুটি জিনিস চাইতে এসেছি। আর সেই দুটি জিনিসের মধ্যে একটি হল ‘জনতা কারফিউ’।” আর এই জনতা কারফিউয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের নাগরিকদের কাছে আবেদন জানান, ‘রবিবার ২২ শে মার্চ জনতা কারফিউ মেনে চলার।’ যে কারণে সকাল ৭টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা নিজেদের মধ্যে গৃহবন্দি করে রাখার কথা বলেন। তারপর থেকে বিরোধীরা অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন এই জনতা কারফিউ নিয়ে। তবে এই জনতা কারফিউকে সর্বসম্মতভাবে সম্মতি জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘WHO’।

আর আজই সেই জনতা কারফিউয়ের দিন। জনতা কারফিউ শুরু হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ট্যুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, ‘আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেশজুড়ে শুরু হবে জনতা কারফিউ’। এই জনতা কারফিউয়ে কেমন সাড়া পাওয়া যাবে? তা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেকের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেয়। তবে রবিবার সকাল থেকে জনতা কারফিউ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ছবিটা একেবারে আলাদা।

রুটিন মেনে রবিবার সকাল থেকে সরকারি বাস রাস্তায় বের হলেও যাত্রীদের দেখা নেই। জেলায় জেলায় প্রতিটি রেলস্টেশন খাঁ খাঁ করছে। দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া, বোলপুর, চাতরা আপাতত জেলার প্রত্যেকটি জায়গায় রাস্তাঘাট, বাজার খাঁ খাঁ করছে। বেসরকারি বাসের চাকা নড়েনি। সকালের পরিস্থিতি দেখে অনেকেই মনে করছেন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সেই পদক্ষেপে দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছেন।আর এমন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সাধারণ মানুষ যদি সাড়া দেয় তাহলে এই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

সিউড়ি রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার এক কর্মী সকালেই জানান, “সরকারি বাস চলছে কিন্তু যাত্রীরা বাড়ি থেকে বের হননি। আমরা আমাদের জরুরি পরিষেবা চালু রেখেছি। একান্তই যে সকল মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হবে তারা বাসে চড়ছেন। আমরা তাদের পরিষেবা দিচ্ছি।”