ঘুগনি বেচা মেয়েটাই খেলবে ভারতের ক্রিকেট ‘এ’ দলে, শ্রীলেখার সংগ্রামকে কুর্নিশ

নিজস্ব প্রতিবেদন : সংসার চালাতে একসময় ঘুগনি বিক্রি করেছেন। তবে কঠিন অধ্যাবসায়ী এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি সমস্ত আর্থিক প্রতিকূলতাকে দূর করে আজ তাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার দিকেই এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও ভারতীয় ক্রিকেট ‘এ’ (Team India) দলের হয়ে চ্যালেঞ্জার্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ করে নিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের(Purba Burdwan) ভাতারের বড়বেলুন গ্রামের কিশোরী শ্রীলেখা রায় (Srilekha Roy)।

শ্রীলেখার বাবা ছিলেন একজন ফুটবলার। তবে তিনি ছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। শ্রীলেখা যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে সেই সময়ে তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। এর পর সংসারের হাল ধরতে শ্রীলেখার দিদা ঘুগনি তৈরি করতেন এবং সেই ঘুগনি পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করে বেড়াতেন এই কিশোরী। অন্যদিকে তার মা দিনমজুরের কাজ করতেন।

সংসারের হাল ধরতে রোজগারের তাগিদে ছুটলেও তার লক্ষ্য ছিল খেলার দিকে। একসময় সে ফুটবল খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাড়িতে ফুটবল খেলতে না দেওয়াই ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। খোঁজখবর নিয়ে এলাকার অগ্রগামী নামে একটি ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই ক্লাব কর্তারা শ্রীলেখাকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য রাজি হন।

২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় শ্রীলেখার ক্রিকেট খেলা। খেলা শুরু করার প্রথম দিকে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্যদের মত ব্যাট-বলের সুযোগ পেতেন না শ্রীলেখা। তবে সুযোগ পেয়েই সে তার প্রতিভা দেখাতে শুরু করেন। ভাতার অগ্রগামী ক্রিকেট একাডেমির প্রশিক্ষক অনির্বাণ হাজরা, নীলকন্ঠ পাঁজা ও রাহুল আলমরা এই ছোট্ট মেয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা খুঁজে পান। তারপর চরম আর্থিক সংকটের মধ্যেও দুর্গাপুরে তিনি কোচিং নেন।

পরবর্তীতে সে পৌঁছে যায় কলকাতায় এবং সেখান থেকেই শ্রীলেখা সিএবি লিগে মিজোরামে ২০১৭- ২০১৮ বর্ষে অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলার হয়ে খেলার সুযোগ পান। এই খেলায় পাঁচটি একদিনের ম্যাচে একটি ম্যাচে ৩০ বলে ২১ রান করে নট আউট ও ছয় ওভার বল করে একটি মেডেন সহ মাত্র ৯ রান দিয়ে ২টি উইকেট সংগ্রহ করে। তার পরেই সে নজর কাড়ে নির্বাচকদের। সম্প্রতি শ্রীলেখা জানতে পেরেছেন, অনুর্ধ্ব ১৯ মহিলা ক্রিকেট চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে ভারতের হয়ে নির্বাচিত হয়েছে তাঁর নাম।

শ্রীলেখার এই অদম্য লড়াইয়ে যেমন আজ আপ্লুত তার মা রেখা রায়, ঠিক তেমনি তার এই অদম্য লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা বাংলা। তবে শ্রীলেখা এখানেই থেমে থাকতে চাই না, তার চোখে স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ার।