মালদার ঐতিহ্য জহরা কালী, রইলো অজানা ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদন : মালদার ইংরেজ বাজার থানার রায়পুর গ্রামে রয়েছে জহরা কালী মন্দির। সারা বছর এখানে দেবী পুজো পান। তবে বৈশাখ মাসে দেবী জহরার প্রতিষ্ঠা মাস উপলক্ষে এই মাসের প্রতি মঙ্গল ও শনিবার বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হয়।

এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। শোনা যায় যে, যে যা মনস্কামনা নিয়ে আসেন তা পূর্ণ করেন মা। কথিত আছে, আজ থেকে আনুমানিক ৩০০ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরই এই দেবীর পুজো শুরু হয়েছে। সেই সময় উত্তরপ্রদেশের এক সাধক স্বপ্নাদেশ পান জহরা দেবীর পুজো করার জন্য। এরপর তিনি দেবীর পুজো শুরু করেন। পরবর্তীকালে সেই পুজো সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

দেবী জহরার পুজো এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে দুই বাংলার সাধারণ মানুষও এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতেন। আর সেই সাথে জঙ্গলের ডাকাতরাও ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এই দেবীর পুজো করতেন।

বর্তমানে এই দেবীর পুজোয় ঝাড়খন্ড, বিহার প্রভৃতি পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকেও লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হন। বৈশাখ মাসে বিশেষ পুজো উপলক্ষে বড় মেলা বসে সেখানে। তবে এই মন্দিরের বিশেষত্ব এটাই যে অন্যান্য কালী মন্দিরের মতো এখানে রাত্রে বেলায় পুজো হয় না। দিনের আলো থাকাকালীনই দেবীর পুজো করা হয়। এই মন্দিরে দেবী চণ্ডীর আরাধনা করা হয়।

বর্তমানে এই মন্দিরের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন স্থানীয় তেওয়ারি পরিবার। সেই পরিবারেরই পুরোহিত রমেশ তেওয়ারি বলেন, “প্রতি বছর বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার এখানে ধুমধাম করে জহরা কালীর পুজো হয়। মালদা জেলা সহ গোটা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় এখানে। এই জহরা কালী অত্যন্ত জাগ্রত। কোন ভক্ত এসে কোন মানত করলে তা কয়েক দিনের মধ্যেই পূরণ হয়ে যায়।”

এই পুজার উৎপত্তি সম্পর্কে নানাজনে নানা রকম কথা বলেন। কেউ কেউ বলেন যে, বল্লাল সেনের আমলে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরগুলির মধ্যে এটি একটি মন্দির। আবার কেউ বলেন ৩০০ বছর আগে উত্তর প্রদেশের এক সাধক দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে গড়ের উপর দেবী জহরা চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীকালে হীরারাম তিওয়ারি নামের এক সাধক দিব্য দর্শনে দেবীর রূপ প্রত্যক্ষ করেন বলেও শোনা যায়। আবার অনেকে বলেন যে ডাকাতদের হাতেই এই পুজোর সূচনা।

অনেককাল আগে ডাকাতরা ডাকাতি করা ধনরত্ন মাটির তলায় চাপা দিয়ে রাখতো। আর তার উপরে তারা দেবী মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেছিল। ধনরত্নকে হিন্দিতে জওহর বলা হয়, দেবীমূর্তির নীচে ধনরত্ন থাকতে বলেই দেবী এখানে জহরা নামে পরিচিত।

শোনা যায়, যে সাধক দেবীর দিব্যদর্শন পেয়েছিলেন তিনি মূর্তির রূপলেখা নির্মাণ করেন বৈশাখ মাসে। দেবীর এই মূর্তি অন্যান্য মূর্তিগুলির মত নয়। লাল রংয়ের ঢিবির ওপর রয়েছে এক মুখোশ। ঢিবির দুই পাশে আরও দুটি মুখোশ দেখা যায় এছাড়া গর্ভগৃহে শিব আর গণেশের মূর্তি আছে। দেবীর ভিন্ন রূপ সম্পর্কে অনেকে বলেন যে অনেককাল আগে নাকি দেবী জহরার পূর্ণাবয়ব বিগ্রহ ছিল কিন্তু যখন বিধর্মীদের আক্রমণ শুরু হয় তখন বিধর্মীদের হাত থেকে এই দেবীর মূর্তি রক্ষা করবার জন্য পুরোহিতরা সেই মূর্তিতে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন, সেই কারণেই দেবীর এমন রূপ।

রায়পুর গ্রামের আম বাগানের মধ্যে লালচে গেরুয়া রঙের পঞ্চরত্ন ধাঁচের এই মন্দির। এই মন্দির চত্বরে বহু মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে করে আসেন তাই এই চত্বরে এখনো ঘোড়ার গাড়ি বিশেষভাবে চোখে পড়ে। তবে অনেকে পায়ে হেঁটেও আসেন দেবীর কাছে। এই দেবী এত জাগ্রত যে শুদ্ধ বিশ্বাসেও ভক্তিযুক্ত মনে কেউ দেবীর কাছে কিছু চাইলে দেবী তাকে ফেরান না।