জল্পনা বাড়িয়ে হঠাৎ পদত্যাগ সিউড়ি পৌরসভার প্রশাসকের, ‘তৃণমূল ভাঙছে’ খোঁচা বিজেপির

হিমাদ্রি মণ্ডল : সিউড়ি পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ২৬ শে মে সিউড়ির দায়িত্বে বসে বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। যাতে প্রথম দফায় তিনজন এবং পরে আরও একজনকে নিযুক্ত করে বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর গঠন করা হয়। আর এই বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরে এযাবৎ প্রশাসক পদে ছিলেন সিউড়ি পৌরসভার প্রাক্তণ চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চাটার্জী। কিন্তু হঠাৎ জানা যায় তার জায়গায় মঙ্গলবার থেকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রাক্তণ কাউন্সিলর তথা বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সদস্য অঞ্জন করকে। জল্পনা বাড়িয়ে হঠাৎ পদত্যাগ সিউড়ি পৌরসভার প্রশাসক পদত্যাগ করেছেন। আর এই ঘটনার পরেই বিজেপির খোঁচা, ‘তৃণমূলের আর কিছু বাকি থাকবেনা। ঘর তাসের ঘরের মতো ভাঙতে শুরু করেছে।’

কিন্তু প্রশ্ন হলো হঠাৎ সিউড়ি পৌরসভার প্রশাসক পদে থাকা উজ্জ্বল চ্যাটার্জির জায়গায় কেন অঞ্জন করকে বসানো হলো? এই প্রশ্নের উত্তরে সিউড়ি পৌরসভার বর্তমান প্রশাসক অঞ্জন কর জানিয়েছেন, “গতকাল বিকেল চারটের পর আমি জানতে পারি আমাকে চেয়ারপার্সন করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে করা হয়েছে বা কি ব্যাপার সে সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। সে ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই, কারণ এটা রাজ্যের এবং জেলার ব্যাপার।”

তবে অঞ্জন বাবু এটাও জানিয়েছেন যে, “আমার সঙ্গে গতকালই উজ্জ্বল বাবুর কথা হয়েছে। আমরা আগেও একসাথে বৈঠক করে কাজকর্ম করেছি। আর আগামীদিনেও একসাথে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কাজকর্ম চালিয়ে যাবো।”

কিন্তু এতো গেল অঞ্জন বাবুর কথা। যিনি এমন পদ বদলের বিষয়ে কিছু বলেননি এবং পুরো বিষয়টিকেই জানেন না ও রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্তের ঘাড়ে ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু কথা হলো উজ্জ্বল বাবু কি বলছেন! কারণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন যখন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন অঞ্জন বাবু তখন তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি সিউড়ি পৌরসভায়। যার পরেই রাজনৈতিক মহলে বাড়তে শুরু করে জল্পনা।

সিউড়ি পৌরসভা তার উপস্থিতি না থাকার বিষয়ে উজ্জ্বল বাবু জানিয়েছেন, “আমার কাছে কাজটা আগে। দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চলছে আমার ওয়ার্ডে। যে কারণে আমি এটিকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে মানুষের ঘরে ঘরে ঘুরছি। আমি দলের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যেতে চাই।”

পাশাপাশি তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, “প্রশাসক বদলের বিষয়ে বলার কিছু নেই। গত চার দিন আগে আমি ব্যক্তিগত কারণে জেলা সভাপতিকে প্রশাসক পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছিলাম। সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী আজ নতুন বোর্ড গঠন করে নতুন প্রশাসক বেছে নেওয়া হলো।” তবে একথা জানানোর পাশাপাশি উজ্জ্বল বাবু এটাও জানিয়ে রাখেন, “আগামী দিনে যদি কিছু চিন্তাভাবনা থাকে তাহলে আপনাদের (সাংবাদিকদের) বলবো।”

তবে সিউড়ি পৌরসভা বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সদস্যদের এমন পদে রদবদল নিয়ে শাসকদলের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেও বিজেপি এই ঘটনায় খোঁচা দিতে ছাড়েনি। বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল জানিয়েছেন, “সিউড়ি পৌরসভার এই ঘটনায় পরস্পর পরস্পরের বিরোধী কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের আর কিছু বাকি থাকবেনা। ঘর তাসের ঘরের মতো ভাঙতে শুরু করেছে। দলে ওদের নেতা-নেত্রীর কোন ঠিকঠাক নেই। পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচারণ করছে। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস আস্থা হারিয়েছে। এইজন্যে এমন কাণ্ড ঘটেছে এবং সারা বাংলা জুড়ে এমনটাই ঘটছে। তৃণমূল দলটা আর টিকবে কিনা সন্দেহ আছে। যারা ধান্দাবাজ, তারাই দলে টিকবে আর বাকিরা সব বেরিয়ে যাবে।”