মন্ত্রীর হাত ধরে ঘটা করে উদ্বোধনই সার! সৌরচালিত উনুনে বন্ধ তারা মায়ের ভোগ রান্না

নিজস্ব প্রতিবেদন : কাঠের উনুনে তারা মায়ের ভোগ রান্না বন্ধ করে সৌর উনুনে মা তারার ভোগ রান্নার পরিকল্পনা নেওয়া হয় বেশ কয়েক বছর আগে।  সেই মতো সৌর উনুন বসানোর পরিকল্পনা। তারাপীঠ রামপুরহাট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (টিআরডিএ) গঠন করে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা মত মূল মন্দিরকে অক্ষত রেখে অফিস, রান্নাঘর ভেঙ্গে মন্দির চত্বরকে খোলামেলা করার কাজ শুরু হয়। মন্দিরের চারধারে তৈরি হয় আণ্ডার গ্রাউণ্ড। তারই একদিকে তৈরি হয় ভোগ ঘর।

কথিত আছে, পাল রাজত্বের সময়কালে শুক্লা চর্তুদশী তিথিতে জয়দত্ত সদাগর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশানের শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুন্ডির আসনের নিচে থেকে মায়ের শিলামূর্তি উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজোর পাশাপাশি নিত্য ভোগের প্রচলন করেন। সেই ভোগের প্রচলনের পর প্রাচীনকাল থেকেই কাঠের উনুনে সেই ভোগ রান্না হয়ে আসছিল। জ্বালানি কাঠের মাধ্যমে ভোগ রান্নার ফলে মায়ের গর্ভগৃহের দেওয়ালে যেমন কালো আস্তরণ জমছিল, ঠিক তেমনই কাঠের ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণও হচ্ছিল। তা রুখতেই সৌর শক্তির মাধ্যমে মায়ের ভোগ রান্নার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন সংস্থাকে একাজে পৃথকভাবে ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার।

কলকাতার একটি সংস্থা মন্দিরের সোলার মেশিন বসিয়ে আণ্ডার গ্রাউণ্ডে ‘সোলার স্টিম কুকিং সিস্টেম’-এর কাজ শুরু করে। গত জানুয়ারি মাসে রামপুরহাটে প্রশাসনিক সভা করতে এসে যার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরজমিনে তা চাক্ষুষও করেন। ভোগ গৃহের পাশে সাড়ে চার মিটার উচ্চতার দু’টি ডিস বসানো হয়েছে। সেগুলির ব্যাসার্ধ ৫.২ মিটার। সেগুলির পাশে সূর্যের তাপ ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে উৎপন্ন ‘স্টিম’ ৩০ মিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে আণ্ডার গ্রাউণ্ডে ভোগ গৃহের সোলার উনুনে পৌঁছবে। দিনে ৩০০০ এর বেশি লোকের রান্না করা যাবে এই উনুনে। তবে একটি কাঠের উনুন রাখা হবে চিরাচরিত প্রথার জন্য মায়ের ভোগের ক্ষেত্রে।

আর এই সমস্ত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে তড়িঘড়ি আগস্ট মাসের শেষে কৌশিকী অমাবস্যার আগে উদ্বোধন করা হয় এই সৌরশক্তি চালিত উনুনের। উদ্বোধন করেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু উদ্বোধনের পরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ। তাহলে কি পরিকল্পনার অভাবে মুখ থুবরে পরেছে এই ব্যবস্থা! প্রশ্ন উঠছে এমনটাই।

তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইত পুলক মুখোপাধ্যায় জানান, “পরিকল্পনামাফিক এই প্রকল্প হয়েছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। এই সৌর উনুনের মাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল ৩০০০ জনের ভোগের রান্নার ব্যবস্থা হবে, কিন্তু এতে ২০ জনের ভোগ রান্না হবে কিনা তাতেই সন্দেহ আছে। এই পরিকল্পনা অর্থ নষ্ট ছাড়া আর কিছু নয়।”

প্রশিক্ষণ ছাড়াই এই সৌর উনুনের উদ্বোধনে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাই উদ্বোধনের পর থেকেই একপ্রকার বন্ধ সৌর উনুনে ভোগ রান্নার ব্যবস্থা।

যদিও টিআরডিএ এর ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “সৌর উনুনে ভোগ রান্নার ব্যবস্থা সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। কিছু টেকনিক্যাল ফল্ট দেখা দিয়েছে তার জন্যই। যে সমস্ত এই সৌর উনুনের প্রতিস্থাপনের দায়িত্বে ছিলেন তাদের আমরা খবর দিয়েছি। তারা বলেছেন লক্ষ্মী পুজোর পরে এসে ঠিক করে দিয়ে যাবেন।”