করোনা আবহে আগস্টে টানা ৯ দিন বন্ধ থাকবে তারাপীঠ মন্দির

নিজস্ব প্রতিবেদন : আগস্ট মাসের ১৯ তারিখ রয়েছে কৌশিকী অমাবস্যা। আর এই কৌশিকী অমাবস্যা হল শক্তিপীঠ তারাপীঠের অন্যতম উৎসব। কারণ এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। শুধু কৌশিকী অমাবস্যার দিন নয়, পাশাপাশি আগে ও পরের দিনগুলিতেও লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীদের সমাগম ঘটে তারাপীঠে। যে কারণে এবছর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বীরভূম জেলা প্রশাসন এবং তারাপীঠ মন্দির কমিটির তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল আগামী ১২ই আগস্ট সকাল থেকে ২০ই আগস্ট পর্যন্ত টানা ৯ দিন সাধারণ পুণ্যার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে তারাপীঠ মন্দিরের দরজা। সাধারণ পুণ্যার্থীদের জন্য মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকলেও রীতি মেনে অমাবস্যার পূজা অর্চনা করবেন নির্দিষ্ট কয়েকজন সেবায়েত।

বুধবার কৌশিকী অমাবস্যা তারাপীঠ মন্দির বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য TRDA কর্তৃপক্ষ, বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং ও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা এবং রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরভূম জেলা পরিষদ পরামর্শদাতা অভিজিৎ সিংহ, তারাপীঠের হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ও তারাপীঠ মন্দির কমিটির সদস্যদের নিয়ে তারাপীঠে একটি বৈঠক হয়। যে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ১২ই আগস্ট থেকে ২০ই আগস্ট পর্যন্ত সাধারণ পুণ্যার্থীদের জন্য তারাপীঠ মন্দির বন্ধ রাখা হবে।

তারাপীঠ মন্দির বন্ধ রাখা ছাড়াও চলতি বছর কৌশিকী অমাবস্যা তারাপীঠ শ্মশানে কোনরকম হোম যজ্ঞের আয়োজন করা হবে না বলে জানান কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে এদিনের মিটিংয়ে উপস্থিত সমস্ত পক্ষের তরফ থেকেই এবং তারা প্রত্যেকেই প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা জানান।

কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “এই ক’দিন মন্দির বন্ধ থাকাকালীন মন্দির কমিটি ১০ থেকে ১২ জন সেবায়েতকে ঠিক করে দেবে যারা নিত্য পূজা এবং অমাবস্যার পূজা চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে এই সময় কোন রকম হোটেল বুকিং নেওয়া হবে না। শ্মশান কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে এসময় শ্মশানে এবছর কোনরকম যাগ-যজ্ঞ এবং ভান্ডারা করা হবে না। এছাড়াও আটলা, দেখুড়িয়া এসব জায়গাতেও বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে সারা ভারত থেকে ৪ থেকে ৫ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এত সংখ্যক মানুষের সমাগম হলে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, ভারতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মুহূর্তেই প্রথম তারাপীঠ মন্দির কমিটির সিদ্ধান্ত নেয় সাধারণ ভক্তদের জন্য মন্দির বন্ধ রাখার। এরপর টানা ৯৩ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে রথযাত্রার দিনে তারাপীঠ মন্দির সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। মন্দির খুলে দেওয়া হলেও বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভক্তদের গর্ভগৃহে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দিরে পুজো দেওয়ার রীতি চালু হয়। চলতি বছর তারাপীঠে রথযাত্রার দিন তারা মাকে অন্যান্য বছরের মতো রাজবেশে পরিক্রমা করানো হয়নি। আর এরপর আবার কৌশিকী অমাবস্যা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত টানা ৯ দিন মন্দির সাধারণ পুণ্যার্থীদের জন্য বন্ধ রাখার।