হার মানাবে সিনেমাকেও, অপহরণের নাটক করে গ্রেফতার স্কুল শিক্ষকসহ ৩ জন

হিমাদ্রি মন্ডল : গতকাল অর্থাৎ রবিবার সকাল বেলা সিউড়ি থানার অন্তর্গত গড়ুইঝোড়া গ্রামের সিরাজ খানের কাছে ফোন আছে তার ছেলে আমির খানকে অপহরণ করা হয়েছে। আর ছেলেকে ফিরে পেতে ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে তারা যেন জমা দেয়। মুক্তিপণের টাকা জমা দেওয়ার জন্য একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়। আর এর পরেই সিরাজ খান তৎক্ষণাৎ সিউড়ি থানার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন।

সিউড়ি থানার পুলিশ সিরাজ খানকে বলেন যারা ফোন করেছিল তাদের নম্বরে পুনরায় ফোন করতে এবং বলতে আজ রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করা যাবে না। নগদ টাকা নিয়ে আসছি। নির্দিষ্ট স্থানে সেই টাকা অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয় সিরাজ খানের তরফ থেকে। অপহরণকারীরা নগদ টাকা পাওয়ার লোভে সিউড়ি থানার অন্তর্গত তসরকাটা জঙ্গলে সিরাজ খানকে আসতে বলেন। আর এর পরেই পুরো ঘটনার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে।

অপহরণকারীদের কথামতো সিরাজ খান পাথরচাপুরি সংলগ্ন একটি জঙ্গলে যান। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে বসে ছিল সিউড়ি থানার পুলিশ। এরপর ঘটনাস্থলে ওই অপহরণকারীরা আসতেই তাদের সিনেমার মতো ধরে ফেলা হয়। পরে দেখা যায় ওই অপহরণকারীদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন আমির খানও। অর্থাৎ যাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে দাবি করে অপহরণকারীরা সে নিজেও অপহরণকারীদের দলে হাজির। আর এই ঘটনায় হতবাক পরিবারের লোকজন থেকে পুলিশ সকলেই।

অপহৃত হওয়া আমির খান, যিনিও কিনা অপহরণকারীদের দলে যুক্ত ছিলেন তিনি নিজে পেশায় একজন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। জানা গিয়েছে, গত শনিবার মায়ের সঙ্গে টাকা নিয়ে ঝামেলা করে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। এরপর দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে অপহরণের ছক কষে আমির খান নিজেই। এদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করার পর সোমবার সিউড়ি আদালতে তোলা হয়। সিউড়ি আদালতের মহামান্য বিচারক ওই তিন অভিযুক্তকে তিন দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অপহরণের ছক কষা অর্থাৎ মূল অভিযুক্ত আমির খানের দুই সঙ্গীর নাম সুমন রায় ও পল্টু মাহারা। ঘটনার বিষয়ে সিউড়ি আদালতের আইনজীবী চন্দ্রনাথ গোস্বামী জানান, “পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছে ছেলেটি অর্থাৎ আমির খান নেশা করতো। যে কারণে টাকার অভাব হওয়াই ২৭ তারিখ মায়ের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর পরিকল্পনামাফিক ২৮ তারিখে অপহরণ হওয়ার কথা জানিয়ে বাড়িতে ফোন করে। মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয় পাঁচ লক্ষ টাকা। তারপরে পুলিশ তদন্তে নেমে পুরো ঘটনা জানতে পারে। তাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এই ঘটনার সাথে আরও কয়েকজন যুক্ত রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য।”

যদিও অভিযুক্ত আমির খান দাবি করেছেন, “আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল আবার আমাকেই গ্রেফতার করা হলো। আমাকে যে অপহরণ করা হয়েছিল তার জন্য আমি থানাতে ডায়েরি করতে এসেছিলাম।” কিন্তু ওই শিক্ষক অর্থাৎ আমির খান এমনটা দাবি করলেও তার কথার সাথে পুলিশের তথ্যের কোন রকম মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।