হাতেনাতে ধরা পড়ল চোর, কেঁদে ফেলতেই লাউ চিংড়ি দিয়ে ভাত খাওয়ালেন গৃহবধূ

নিজস্ব প্রতিবেদন : ঠিক যেন উল্টো পুরাণ। বাড়ি, দোকান অথবা অন্য জায়গায় চুরি করতে আসা চোরেরা ধরা পড়লেই চলে গণধোলাই। গণধোলাইয়ের পর আবার তাদের তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। তবে এই সকল ঘটনার বাইরে সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা সামনে এসেছে যার মধ্যে হাসি কান্না সবকিছুই জায়গা করে নিয়েছে। কেননা এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে এক গৃহবধূ এক চোরকে আদর করে কচু শাক, লাউ চিংড়ি দিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছেন।

চোরকে আদর করে কচু শাক, লাউ চিংড়ি দিয়ে ভাত খাওয়ানোর এমন ঘটনাটি সোমবার ঘটেছে ডুয়ার্সের ওলদাবাড়ি জেল কলোনিতে। সেখানে দিনে দুপুরে জ্যোৎস্না বর্মন নামে এক গৃহবধূর বাড়িতে হানা দেন এক অপরিচিত যুবক। স্থানীয় এক যুবকের থেকে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন পাড়ার রাস্তায় বিশাল একটি বস্তা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন অপরিচিত এক যুবক।

ওই যুবকের গতিবিধি দেখে এলাকার বাসিন্দাদের সন্দেহ হয় এবং তার পথ আটকান। বস্তার ভিতর কি রয়েছে তা জানতে এলাকার বাসিন্দারা শুরু করেন জিজ্ঞাসাবাদ। এরপর বস্তা খুলতেই ঝোলা থেকে বের হয় চুরি করা লোহার তার, কিছু বাসনপত্র এবং এলাকার বাসিন্দা জ্যোৎস্না বর্মনের কিছু পাসপোর্ট ছবি। এসব দেখে এলাকার বাসিন্দারা অনুমান করেন জ্যোৎস্না বর্মনের বাড়ি থেকেই এই সকল জিনিসপত্র চুরি করা হয়েছে।

এরপর তারা ওই যুবককে নিয়ে যান জ্যোৎস্না বর্মনের বাড়িতে এবং সেখানে তাকে বেঁধে রাখা হয়। ওই সময় জ্যোৎস্না বর্মন অন্যের বাড়িতে গিয়েছিলেন রান্না করার জন্য। তিনি খবর পেয়ে এই তড়িঘড়ি নিজের বাড়িতে ছুটে আসেন এবং এসে দেখতে পান ঘরের দরজা খোলা, আলমারি খোলা এবং ঘরের সব জিনিসপত্র তছনছ। এসব দেখে তিনি বুঝতে পারেন কি ঘটেছে।

জ্যোৎস্না দেবী জানান, আলমারিতে একটি সোনার চেন এবং ১০০০ টাকা নগদ ছিল। তিনি সেই টাকা ও সোনার চেন ফেরত পেতে বারবার ওই চোরকে অনুরোধ করেন। সেই সময় এলাকার বাসিন্দারা ওই চোরকে মারধর করার চেষ্টা করলেও বাধা দেন জ্যোৎস্না দেবী। এইরকম পরিস্থিতিতে ওই চোর রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করেন আর সেই কান্না দেখে রাগ গলে যায় জ্যোৎস্না দেবীর।

অন্যদিকে জ্যোৎস্না দেবী বুঝতে পারেন তার বাড়িতে চুরি করতে আসা ঐ যুবক চরম ক্ষুধার্ত। এসব দেখে তিনি থাকতে না পেরে নিজের জন্য রান্না করে রাখা ভাত, ডাল, মাছের ঝোল, কচু শাক, লাউ চিংড়ি দিয়ে ওই চোরকে পেটপুরে খাওয়ান। তবে এইভাবে পেট পুরে খাওয়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে জ্যোৎস্না দেবীর আশা ছিল তার বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া সোনার অলংকার, টাকা সব ফিরে পাবেন। তবে চুরি যাওয়া ১০০০ টাকা ফেরত পেলেও ফেরত পাননি সোনার চেনটি। এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই এলাকার বাসিন্দারা ওই চোরকে তুলে দেন পুলিশের হাতে।