বিকাশ দুবের ডন-এ পরিণত হওয়ার কাহিনী হার মানাবে পর্দার সুপারহিট সিনেমাকেও

Madhab Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : সিনেমার পর্দায় একজন ডন যেভাবে টুক টুক করে কুখ্যাত হয়ে ওঠেন ঠিক তেমনি কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে সদ্য পুলিশের হাতে এনকাউন্টার হওয়া বিকাশ দুবের কাহিনীতেও। কানপুরের চর্মনগরী, যেখানকার ক্রাইম ডাইরির ইতিহাস হল দলিতদের উপর অত্যাচার। আর বিকাশ দুবের উত্থান এখান থেকেই। দলিতদের উপর অত্যাচার, মারধর করে বিকাশের হাতেখড়ি ক্রাইম জগতে। আর এসকল কারণেই প্রথম তাকে জেল খাটতে হয়েছিল।

Advertisements

Advertisements

তারপর জেল থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে শুরু হয় খুন, তোলাবাজি, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি ইত্যাদি। বছরের পর বছর পুলিশের খাতায় তার নামের পাশে যোগ হতে শুরু করে একের পর এক লাল কালির দাগ। আর এইভাবে চলতে চলতে কখনো জেলের ভেতর, কখনো জেলের বাইরে সে তার সম্রাজ্য তৈরি করে। আর তার সাম্রাজ্য তৈরি করার পিছনে রয়েছে একশ্রেণীর নেতা আমলা। যাদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই বিকাশ দুবে আজ এতবড় ডন। যদিও সেই ডনের পুলিশ এনকাউন্টার হয় শুক্রবারই।

Advertisements

জানা যায়, বিকাশ দুবের বয়স যখন মাত্র ২০ বছর তখন তাকে একবার পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণ হল তার বাবার সাথে কোন এক নিম্নবর্ণের মানুষের গন্ডগোল হয়। আর সেই গন্ডগোল থেকে মারধর শুরু হলে সেই মারধরে নাম জড়ায় বিকাশের। যদিও বেশিক্ষণ থানায় আটকে রাখা যায়নি বিকাশকে। স্থানীয় কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্দেশে পুলিশ তাকে থানা থেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এমনকি সেই ঘটনায় কোনরকম মামলাও রুজু হয়নি। এর পর ফের ১৯৯১ সালে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এবারের গ্রেফতারের ঘটনায় একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। তবে মামলা রুজু হলেও আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন কোনরকম জেল হেফাজত ছাড়াই। তার পরের বছর থেকেই বিকাশ দুবের ক্রিমিনাল অধ্যায় আরও বিস্তার লাভ করে। কানপুরের এলাকা ছাড়িয়ে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা উত্তরপ্রদেশে। এরপর দলিত দুই যুবককে গুলি করে খুন করে সে। যে ঘটনায় তার জেল হয়েছিল, তবে তা মাত্র কয়েকদিনের জন্য। জামিন পেয়ে স্বমহিমায় নিজের মহল্লায় ফিরে আসে।

এরপরেই তার সরাসরি রাজনীতি যোগ শুরু হয়। একাধিক রাজনৈতিক নেতার হাত পড়ে তার মাথার উপর। ধীরে ধীরে সে এলাকার রোল মডেলে পরিণত হয়। বিকাশ দুবে এলাকার যুবকদের নিয়ে তৈরি করে ফেলে অ্যাকশন স্কোয়াড। সেই অ্যাকশন স্কোয়াডের উপর ভর করে তার সাম্রাজ্য বিস্তার হয় কানপুরের বাইরেও ১৯৯৩ সালে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের ভরসা হয়ে ওঠে বিকাশ ও তার দলবল। ভোট থেকে ব্যবসা সমস্ত কিছুই চলতে থাকে বিকাশ দুবের নিয়ন্ত্রণে। আর যে সকল রাজনৈতিক দলের হয়ে বিকাশ কাজ করতো তা পরিস্থিতি অনুযায়ী টাকার বিশাল অঙ্ক হেঁকে।

তবে সে কোনো বাঁধাধরা রাজনৈতিক দলের হয়ে কখনো কাজ করেনি। টাকা আর প্রতিপত্তির উপর বিচার করে মাঝে মধ্যেই বদলে ফেলত রাজনৈতিক দল। স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী তাকে কখনো দেখা দিয়েছে বিএসপি-র হয়ে কাজ করতে, কখনো আবার বিজেপির হয়ে। নিজের প্রতিপত্তি এবং সাম্রাজ্য সে এতটাই বিস্তার করেছিল যে এলাকায় একটা ইঁট গাঁথতে পর্যন্ত বিকাশ দুবের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হতো স্থানীয়দের। মোটের উপর তার এমন অত্যাচারী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু উপায় নেই, তার মাথার উপর সরাসরি রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে প্রভাবশালী আমলারা ছাতার মতো ছায়া দিয়ে রেখেছিল। ১৯৯৬ সালে সে সরাসরি বহু জন সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেয়। যদিও সেখানে বেশিদিন তিনি স্থায়ী হননি।

শুধু এখানেই শেষ নয়, এলাকার জমিজমা কে কিনবে তাও ঠিক করে দিতো বিকাশ। আর এই জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে ২০০০ সালে তারচাঁদ ইন্টার কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধেশ্বর পাণ্ডেকে সে খুন করে। ঠিক তার পরের বছরই বিজেপি নেতা সন্তোষ শুক্লকে হত্যার ঘটনায় তার নাম জড়ায়। তবে এরপরে যখন বিএসপির ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে তখন বিকাশ দুবে পুনরায় বিজেপির দিকে ঝুঁকতে থাকে। শেষমেষ দীর্ঘদিন সে বিজেপি ছত্রচ্ছায়াতেই ছিল। তবে ২০১৭ সালে যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের কুর্সিতে বসার পরই বিকাশ দুবের পায়ের তলার মাটি আস্তে আস্তে আলগা হতে শুরু করে।

এর পিছনে রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সিংহাসনে বসার পর মাফিয়াদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ। আর এসময় বিকাশ দুবে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে বিজেপির দিকে ঝুঁকতে শুরু করলেও সন্তোষ শুক্লর পরিবারের কথা মাথায় রেখে এই কুখ্যাত ডনকে আর দলে নেওয়ার কোনো সুযোগই দেওয়া হয়নি। আর এরই মাঝে বিকাশ দুবে ও তার দলবল মাওবাদী অপারেশনের ধাঁচে ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেড সহ আটজন পুলিশকর্মীকে খুন করে বসে। তারপর তার ডান হাত অমরকে এনকাউন্টার এবং শেষমেষ বৃহস্পতিবার পুলিশের জালে আসে বিকাশ। পুলিশের জালে আসার পরই শুক্রবার পালিয়ে যেতে গেলে তাকেও এনকাউন্টার করা হয়।

Advertisements