টিকা না নেওয়া ছোটদের শরীরেও আটকে যাচ্ছে কয়েন, চামচ! অবশেষে পর্দা ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা টিকা নেওয়ার সাথে সাথেই মানব শরীরে তৈরি হচ্ছে চুম্বক শক্তি। যে কারণে কয়েন, চামচ সহ অন্যান্য ধাতব বস্তু আটকে পড়ছে। গত সপ্তাহ থেকেই এমন ম্যাগনেট ম্যান হওয়ার আজব দাবিতে তোলপাড় হয়েছে দেশ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া।

একাধিক মানুষ দাবী করছেন, করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তারা ম্যাগনেট ম্যানে পরিণত হয়েছেন। অর্থাৎ তাদের শরীরের মধ্যে একটি চুম্বকীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে তাদের শরীরে কয়েন বা চামচ ইত্যাদি আটকে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর হাতে, বুকে কয়েন, চামচ আটকে যাওয়ার মত একাধিক ঘটনার খবরও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল সত্যিই কি টিকা নেওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে? এই ঘটনার পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল কারণটাই বা কী?

এই ঘটনার আসল কারণ এবং মানুষের মধ্যে যে অযৌক্তিক ধারণা তৈরি হয়েছে তার পর্দা ফাঁস করেছেন বসিরহাটের ‘চেতনায় বিজ্ঞান’ শাখার সম্পাদক মলয় মন্ডল। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে শরীরে কয়েন বা চামচ আটকে থাকার গুজবের বিরুদ্ধে প্রমাণ স্বরূপ কিছু কথা বলেছেন।

ভিডিওর শুরুতেই তিনি পুরো বিষয়টিকে খোলসা করে বলেছেন, “এই বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। আমার ছেলে ঈশান মন্ডল করোনা ভ্যাকসিন নেয় নি। কিন্তু দেখুন তার শরীরেও চামচ, কয়েন আটকে যাচ্ছে।”

এরপর তিনি বলেন যে কেন এমনটা হচ্ছে?

মলয়বাবুর কথায়, “আসলে চামচের মধ্যে একটা বাঁক আছে। এই কারণে শরীরের স্কিনের সঙ্গে চামচের পৃষ্ঠতলের যে সারফেসটেনশন অর্থাৎ যাকে পৃষ্ঠটান বলা হয় তার কারণেই এটি আটকে আছে।”

এরপর তিনি আরও কতগুলি হাতা ও সাঁড়াশি নিয়ে আসেন ও ছেলের শরীরে দিয়ে দেন। এরপর ভিডিওটিতে দেখা যায় যে ঈশানের শরীরে হাতাটা আটকে গেলেও সাঁড়াশিটা আটকাচ্ছে না। তিনি বিষয়টিকে আরও ব্যাখ্যা করে দেখান যে তার ছেলের শরীরে পেটের দিকে সাঁড়াশিটা না আটকালেও বুকের কাছে সেটা ঠিকই আটকে যাচ্ছে পৃষ্ঠটানের কারণে।” এই ভাবেই তিনি পুরো বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন।

পাশাপাশি যে সমস্ত ব্যক্তিরা টিকা নেওয়ার পর তাদের শরীরে এসকল ধাতব বস্তু আটকে যাওয়ার দাবি করছিলেন তাদের প্রত্যেকের শরীরে পাউডার লাগানোর সাথে সাথে এই ঘটনা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। পাউডার লাগানোর পর আর কারোর শরীরে কোনরকম ধাতব বস্তু যেমন কয়েন অথবা চামচ আটকাচ্ছে না।

বৈজ্ঞানিক ভাষায় এই ঘটনা হল আসঞ্জন বল। যে বলের পরিপ্রেক্ষিতে শরীরে ধাতব বস্তু আটকে থাকাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। দুটি ভিন্ন বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের অণুগুলির মধ্যে আসঞ্জন বল কাজ করার জন্য  আকর্ষণের কাজ করে। পাশাপাশি শরীরের ঘাম এবং অন্যান্য ক্ষরণের জন্য স্বাভাবিকভাবেই শরীরে ধাতব পদার্থগুলি আটকে থাকে।