দড়ি, শিকল দিয়ে বেঁধে শ্মশানকালীর বিসর্জন, শতাব্দী প্রাচীন রীতি আজও অটুট

লাল্টু : দুর্গাপূজা সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই বীরভূমের বেশ কিছু জায়গায় কালী আরাধনা নিয়ে শুরু হয় তৎপরতা। এই সকল উল্লেখযোগ্য কালীপুজোর মধ্যে রয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুর শহরের দাসপাড়ার শ্মশানকালী। শতাব্দী প্রাচীন এই কালীপুজোর ক্ষেত্রে রয়েছে নানান রীতিনীতি, বিসর্জনের ক্ষেত্রেও রয়েছে আলাদা রীতি।

দুবরাজপুরের দাসপাড়ার এই শ্মশানকালী বিসর্জন থেকে শুরু করে মূর্তি তৈরি করা, পুজো করা সবই হয়ে থাকে বৈষ্ণবদের হাত দিয়ে। দুর্গাপুজোর পর একাদশীর দিন এই শ্মশান কালীর বিসর্জন হয়ে থাকে। বিসর্জনের সমস্ত দায়িত্ব থাকে এলাকার দাস পরিবারের হাতে। এর পর পুনরায় মূর্তি তৈরি করার কাজ শুরু হয় তেরোদশীর দিন। ফের পুনরায় মূর্তি তৈরি হলে কালীপুজোর দিন রীতি মেনে পুজো করা হয় এবং সারা বছর মন্দিরে বিরাজ করেন এই শ্মশান কালী।

কথিত আছে, একটা সময় এই শ্মশানকালীকে বিসর্জনের আগে ঝাঁটা দেখাতে হত। সঙ্গে সঙ্গে গালিগালাজ করতে হতো, তবেই মা বেদী থেকে নামতেন এবং বিসর্জনের জন্য রওনা দিতেন। তবে বর্তমানে সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই প্রথা বন্ধ হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই প্রথা বন্ধ হলেও এখনও একটি প্রথা রয়ে গেছে, সেটি হল বিসর্জনের সময় মাকে শিকল এবং দড়ি দিয়ে বেঁধে বিসর্জন দিতে হয়। এই শ্মশানকালীর প্রতিমা বিসর্জন করা হয় সামনের রুজ পুকুরে।

প্রতিবছর দুবরাজপুরের দাশপাড়ার এই শ্মশান কালী বিসর্জনকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী গ্রাম এবং অন্যান্য জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। তবে গত দু’বছর ধরে করোনা সংক্রমণের কারণে ভিড়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও লাগাম টানা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে দুবরাজপুর থানার তরফ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রতিমা দীর্ঘক্ষণ মন্দির থেকে বের করে বাইরে না রেখে তাড়াতাড়ি বিসর্জন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিসর্জনের দায়িত্ব পাওয়া দাস পরিবারের সদস্য গুরুপদ দাস জানিয়েছেন, “এক সময় মাকে বেদীতে থেকে নামাতে গালিগালাজ করা হতো এবং ঝাঁটাও দেখানো হতো কিন্তু বর্তমান সভ্য সমাজে তা এখন হয় না। তবে এখনও মাকে শিকল বেঁধে বেদি থেকে নামানো হয়। করোনা আবহে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে শ্মশান কালী বিসর্জন হলো। এই বিসর্জনকে কেন্দ্র করে দাসপাড়ার প্রত্যেকের বাড়িতেই আত্মীয়স্বজন আসে। দুর্গাপুজোর থেকেও এই দিনটি এখানকার দাস পরিবারদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”