‘হয়েছে ২৬০০০ শিশু আলয়’, ২২টি এরকম প্রকল্পের খতিয়ান প্রকাশ করলো তৃণমূল

নিজস্ব প্রতিবেদন : ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটে, তৃণমূলের আবির্ভাব হয় শাসক দল হিসাবে। বিগত ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে পরাস্ত করে রাজ্যের শাসনভার অধিকার করে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।শাসক দল হিসাবে রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা ব্যানার্জি শপথ গ্রহণের পর থেকেই বাংলার উন্নয়নের জন্য একের পর এক প্রকল্প রাজ্যবাসীদের সামনে তুলে ধরেন। যদিও এই সকল প্রকল্পগুলি বিরোধীরা নানান সময়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করে থাকলেও সম্প্রতি অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস তাদের এই প্রকল্পগুলির ২২ টি প্রকল্প একটি ছোট ভিডিওর মাধ্যমে তাদের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে তুলে ধরেছে।

‘বাংলার উন্নয়নে তৃণমূলের ২২ টি প্রকল্প’, ঠিক এভাবেই সেই ভিডিও পোস্ট করে তারা বঙ্গবাসীদের সামনে তৃণমূল সরকারের এই ২২ টি প্রকল্পের ব্যাখ্যা দিয়েছে। পাশাপাশি এই ২২ টি প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন তাও তুলে ধরা হয়েছে সচিত্র সহ।

চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেই সকল ২২ টি প্রকল্প ও প্রকল্পগুলির কি কি সুবিধা

যুবশ্রী : নথিভুক্ত ১ লক্ষ কর্মপ্রার্থী প্রতি মাসে ১৫০০ টাকার আর্থিক সাহায্যকল্পে মুখ্যমন্ত্রী ৩ অক্টোবর ২০১৩ সালে এই প্রকল্প চালু করেন। ২২ লক্ষ কর্মপ্রার্থী এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য সাথী : এই অভিনব স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে আনা হয়েছে। মহিলাদের নামে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড ইস্যু করা হয়। পরিবারের সকলে, এমনকি মহিলার মা-বাবাও এই কার্ডের দৌলতে স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পাবেন।

শিশু সাথী : ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুদের কনজেনিটাল কার্ডিয়াক ডিজিজেস,
ক্লেফট লিপ/প্লেট ও ক্লাব ফুট সমস্যার জন্য বিনামূল্যে শল্য চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ‘শিশুসাথী’ নামে একটি কর্মসূচী চালু হয়েছে। এই প্রকল্পে বছরে ৩,০০০ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করা হয়।

শিশু আলয় : প্রাক-শৈশবে শিক্ষার বিকাশ ঘটানো এবং শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি করতে সকল জেলা
মিলিয়ে ২৬০০০ টির বেশি ‘শিশু আলয়’ তৈরি হয়েছে।

শিক্ষাশ্রী : সরকার পরিচালিত, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার স্বীকৃত স্কুলগুলোতে পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত সকল তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্র ছাত্রীদের আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৩ লক্ষ পড়ুয়া উপকৃত হয়েছে এবং ১৮ লক্ষ আবেদন করেছে।

সমব্যথী : ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ‘সমব্যথী’ নামে একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কোনও মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্য তার নিকটতম আত্মীয়কে ২০০০ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। ২ লক্ষ পরিবার এককালীন আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন।

সেভ ড্রাইফ সেফ লাইফ : ২০১৬ সালের জুলাইয়ে চালু হয় পথ নিরাপত্তা সচেতনতা মূলক ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচী। এর ফলে দুর্ঘটনার হার কমেছে ২৭ শতাংশ এবং পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমেছে ১৭ শতাংশ।

সবুজ সাথী : ২০১৫-১৬ সালে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাইকেল বিতরণের জন্য সবুজ সাথী প্রকল্প ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত মােট ১ কোটি সাইকেল বিলি করা হয়েছে।

রূপশ্রী : এই প্রকল্প অনুযায়ী, যেসকল পরিবারের বার্ষিক আয় ১.৫ লক্ষ টাকার কম, তাদের পরিবারের মেয়ের বিয়েতে
এককালীন ২৫,০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য করবে রাজ্য সরকার। গত জুলাই মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে প্রায় ৬৭৭ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। অনুদান দেওয়া হয়েছে মােট ২ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪৮১ জন।

পথ সাথী : জাতীয় বা রাজ্য সড়কে যাত্রীদের যাতে সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়, তাই রাজ্য সরকার ‘পথসাথী’ হোটেল নির্মাণ
করেছে। এক ছাদের তলায় ব্যবহার যোগ্য শৌচাগার, প্রতীক্ষালয়, রাত্রিবাসের ব্যবস্থা এবং রেস্তোরাঁ সম্বলিত এই পথসাথী। এখন পর্যন্ত ৭০ টি পথ সাথী তৈরি হয়েছে।

মিশন নির্মল বাংলা : ২০১৩ সালে মিশন নির্মল বাংলা চালু করে রাজ্য সরকার। নদীয়া জেলাকে দেশের প্রথম নির্মল জেলা ঘোষণা
করা হয়। ইতিমধ্যেই গ্রামীণ বাংলাকে ১০০% উন্মুক্ত শৌচকর্ম মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

মানবিক : যাদের ৪০% বা তার বেশি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাদের জন্য এই প্রকল্প। এই প্রকল্পে ১০০০ টাকা মাসিক পেনশন দেওয়া হয়। এর ফলে উপকৃত হবেন প্রায় ২ লক্ষ মানুষ।

লোক প্রসার প্রকল্প : বাংলার লোকশিল্পের পুনরজ্জীবন ঘটিয়ে লোক শিল্পীদের মাধ্যমে
সামাজিক বার্তা ও রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্প সম্বন্ধে তথ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ লােকশিল্পীর নাম। এই প্রকল্প নথিভুক্ত হয়েছে।

কৃষক বন্ধু : ১লা ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে এই প্রকল্প চালু হয়। এর মাধ্যমে কৃষকদের চাষের জন্য আর্থিক সাহায্য ছাড়াও বিভিন্ন রকম সাহায্য দেওয়া হয়, মারা গেলে দেওয়া হয় পরিবারকে এককালীন আর্থিক সাহায্য। ৬৬ লক্ষেরও বেশি কৃষক এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।

খাদ্যসাথী : আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারকে ২ টাকা কিলো দরে চাল ও গম দেওয়া হয়। পরিবারের প্রত্যেকে মাসে সর্বাধিক ৫ কিলো চাল বা গম পেতে পারবে এই প্রকল্পের আওতায়। প্রায় ৯ কোটি মানুষ এই প্রকল্পে উপকৃত।

কন্যাশ্রী : ২০১৩ সালের ১লা অক্টোবর এই প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাল্যবিবাহ রোধ করা। ৬০ লক্ষের বেশি মেয়ে এখন পর্যন্ত উপকৃত এই প্রকল্পে।

গীতাঞ্জলি : আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর মানুষের জন্য বাড়ি তৈরি করে দিতে রাজ্যের প্রকল্প গীতাঞ্জলি চালু হয়েছে। এই প্রকল্পে সমতল এলাকায় সুবিধা প্রাপকদের একক প্রতি ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পাহাড়, সুন্দরবন এবং জঙ্গলমহল এলাকায় অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত মােট ২৭.৫৩ লক্ষ বাড়ি নির্মিত হয়েছে এই প্রকল্পে।

গতিধারা : এই প্রকল্পের অধীনে কর্মহীন এবং এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত যুবক-যুবতীদের বাণিজ্যিক যানবাহন কেনার জন্য গাড়ির।
মােট দামের ৩০% অথবা ১ লক্ষ টাকার অনুদান বা ভর্তুকি হিসেবে দেয় সরকার। এখন অবধি ৩৬,০০০ মানুষ এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন।

ফসল বীমা যোজনা : এই রাজ্যে বাংলা ফসল বীমা যোজনা করা হয় সম্পূর্ণ বিনা
খরচে। কৃষকদের বীমার পুরাে টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ফসল-আলু ও আখের জন্য প্রিমিয়ামের সর্বাধিক ৪.৮৫% কৃষকদের দিতে হবে নাকি ব্যয় বহন করবে রাজ্য সরকার।

ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান : বর্তমানে রাজ্যের ১১৫টি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান রয়েছে। এখানে ৪৮ থেকে ৭২ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়। ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১৭ অবধি ৪ কোটি মানুষকে ওষুধের দামে ১,১০০ কোটি টাকার ছাড় দেওয়া হয়েছে।

আনন্দধারা : আর্থিকভাবে দুর্বল নারীদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী সংগঠিত করে এক ব্যাপক গ্রামীণ দারিদ্র বিরোধী কার্যক্রম শুরু করে এই উদ্যোগ। ২০১২ সালের ১৭ই মে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের সূচনা করেন। ৬.৭ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছে।